প্রায় আট বছর আগে ভালোবেসে প্রতিবেশী রাজু আহমেদকে বিয়ে করেছিলেন সাথী আক্তার। বিয়ের পর বেশ ভালোই চলছিল তাদের ঘর-সংসার। কিন্তু বছরখানেক যেতে না যেতেই সংসারের সেই সুখ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে।
পরিবারের অভিযোগ, যৌতুকের টাকার দাবিতে প্রায়ই সাথীকে শারীরিক-মানসিকসহ নানা নির্যাতন করত শ্বশুরবাড়ির লোকজন। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকায় কেউ কথা বললে এখন কোনো সাড়া দেয় না সাথী। খাওয়া-দাওয়া এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে তার।
মেয়েকে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেছেন মা। তবে অভিযোগের বিষয়ে রাজু বা তার পরিবারের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মামলার পর থেকেই তারা পলাতক আছেন। ফোন দেয়া হলেও সাড়া দেননি কেউ।
সাথী আক্তার ফরিদপুর শহরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের ধুলদী গোবিন্দপুর গ্রামের বারেক শেখের মেয়ে। স্বামী রাজুর বাড়িও একই গ্রামে।
সাথীর মা নুরজাহান জানান, বিয়ের পর ধারদেনা করে ২ লাখ টাকা রাজুকে দেন। কিছুদিন পর ফের ৫ লাখ টাকা চান রাজু। টাকা না পেয়ে সাথীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন।
এ নিয়ে বিভিন্ন সময় রাজুর পরিবারের অন্যরাও তাকে নির্যাতন করে। এর মধ্যেই মা হয় সাথী। তার মেয়ের বয়স এখন প্রায় চার বছর। শিশুটিকে মায়ের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৩০ নভেম্বর সাথীকে মারধর করা হয়। আমি ও সাথীর বাবা গিয়ে তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পাই। তখন রাজু ও তার পরিবার এমন ঘটনা আর ঘটবে না বলে আমাদের আশ্বস্ত করেন।
‘সবশেষ গত ৩১ জানুয়ারি স্বামীর বাড়িতে তাকে আবারও মারধর করা হয়। আহত অবস্থায় সাথীকে স্থানীয়রা ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসার খরচ চালাতে না পেরে ২ ফেব্রুয়ারি তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।’
ধারাবাহিক নির্যাতন সইতে না পেরে সাথী এখন অসুস্থ ও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে জানিয়ে মা নুরজাহান বলেন, ‘এখন কেউ কথা বললেও সাড়া দেয় না। খাওয়া-দাওয়া এক প্রকার বন্ধ। বর্তমানে বাড়িতেই চলছে তার চিকিৎসা। আমরা নির্যাতনকারীদের শাস্তি চাই।’
সাথীর বাবা বারেক শেখ বলেন, ‘আমি একটি তেলের পাম্পের সামান্য বেতনের কর্মচারী। ফলে আমি মেয়ের জামাইয়ের যৌতুকের আবদার মেটাতে পারিনি। যার কারণে তারা আমার মেয়েকে নানাভাবে নির্যাতন করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে অম্বিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চৌধুরী বারী বলেন, ‘স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়েটিকে এমনভাবে নির্যাতন করেছে, যা কাম্য নয়। আমি এই নির্যাতনের বিচার চাই।’
সাথীর ওপর নির্যাতনের অভিযোগে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়েছে। তবে তা মানেননি রাজু ও তার পরিবারের লোকজন।
এ ঘটনায় মা নুরজাহান বেগম ৩ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলার পর থেকে রাজুসহ তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক। ফোনে রাজুর বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি সাড়া দেননি। বক্তব্য পাওয়া যায়নি পরিবারের অন্যদেরও।
সাথীর শরীরে নির্যাতনের আলামত ছিল জানিয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার শিরীন পারভিন বলেন, ‘হাসপাতালে সাথীকে শারীরিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।’
পরিবার বলছে সাথী মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমরা তাকে স্বাভাবিক চিকিৎসা দিয়েছি। তাকে আমরা পর্যবেক্ষণে রাখিনি, এ বিষয়ে বলতে পারব না।’
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, ‘সাথীর ওপর নির্যাতনের মামলার বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুল আলম বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। মেয়েটির খোঁজ নেব।’