‘আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হবো’- জহির রায়হানের 'আরেক ফাল্গুন'-এর এ লাইনের মতোই যেন বসন্ত উদযাপন আর ভালোবাসা দিবসে সব ফুলের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে তিন-চার গুণও হয়।
বসন্তের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গেই জমে ওঠে ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালী ফুলের বাজার।
দেশের বৃহত্তম ফুলের বাজার গদখালীতে কাকডাকা ভোর থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি দেখা যায়। বেলা বেড়ে সরব হয় ফুলের বাজার। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুলের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন শত শত ফুলচাষি।
কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফুলের দাম নিয়ে কথা বলেন।
দুদিন ধরে ফুলের চাহিদা বাড়তি থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ফুল কিনছেন এই বাজার থেকে। একই সঙ্গে বেশি দাম পাওয়ায় চাষিরাও বাজারে দ্বিগুণ ফুল এনেছেন। সব মিলিয়ে উৎসবের এই মাসে আবারও জমে উঠেছে ফুল কেনাবেচার বাজার। ফুলচাষি আর ব্যবসায়ীদের মনে এখন উৎসবের আমেজ।
মানভেদে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়, যা মাসখানেক আগেও বিক্রি হয়েছে মাত্র ১-৩ টাকা বড়জোর। জারবেরা বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৮-১২ টাকায়। এ ছাড়া গাঁদাফুল বিক্রি হচ্ছে প্রতি হাজার ৫০০-৭০০ টাকায়, যা আগে ছিল ২০০-৩০০ টাকা।
পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস যত কাছে আসবে, ফুলের দামও তত বাড়বে বলে জানিয়েছেন ফুলচাষিরা।
গদখালীর ফুলচাষিদের আশা, আসছে পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ফুলের বেশি দামে করোনাকালীন ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, যশোরে ফুলচাষি রয়েছেন প্রায় ছয় হাজার। তারা অন্তত ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষ করেন। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে অন্তত ১১ ধরনের ফুল চাষ হয়।
বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কলনডালা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল শোভা পাচ্ছে।
সম্প্রতি শীতপ্রধান দেশের ফুল টিউলিপ চাষের মাধ্যমে গদখালীতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে প্রতি বছরই এই এলাকার চাষিরা নতুন জাতের ফুল উপহার দিয়ে থাকেন। গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, লং স্টিক রোজের পর এবারের ভালোবাসা দিবসে ফুলপ্রেমীদের জন্য নতুন উপহার দিচ্ছে এ টিউলিপ।
গদখালীতে প্রথমবারের মতো টিউলিপ চাষ করেছেন পানিসারার ইসমাইল হোসেন। তার পাঁচ শতক জমিতে ফুটেছে বিভিন্ন রঙের সাত প্রকারের টিউলিপ ফুল।
তিনি জানান, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে তার জমিতে টিউলিপ ফোটা শুরু করেছে। ভালোবাসা দিবসে এসব টিউলিপ বিক্রি করা হবে। করোনা আর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের রেশ কাটিয়ে উঠে চাষিরা আশার আলো দেখছিলেন। তবে অসময়ের বৃষ্টিতে অনেক ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। তার পরও বর্তমানে ফুলের যে দাম, তা আগামী তিন দিবস পর্যন্ত থাকলে সব ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে।
গদখালী বাজারের তরুণ ফুলচাষি রাসেল হোসেন বলেন, ‘অনেক দিন পর বেচাকেনা অনেক ভালো হচ্ছে। মহামারি করোনার কারণে ফুলের বাজার বসলেও এতটা প্রাণবন্ত গত কয়েক মাসে ছিল না।’
ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরণ উপলক্ষে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
ফুলচাষি রেজাউল ইসলাম চার বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন।
তিনি জানান, এখন গোলাপের দাম দ্বিগুণ। এক দিন পরে আরও বাড়বে। সে জন্য ফুল ফোটাকে বিলম্ব করতে গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখা হয়েছে। তবে এর জন্য বাড়তি ৩-৪ টাকা খরচ হচ্ছে। ভালোবাসা দিবসকে টার্গেট করে সেই ফুল বিক্রি করতে পারলে সব খরচ উঠে লাভ হবে দ্বিগুণ।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, বিভিন্ন কারণে এবার ফেব্রুয়ারিতে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তিন দিবসে অন্তত ২০-২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হতে পারে।
তিনি আরও জানান, অসময়ের বৃষ্টিতে অনেক ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে সব ধরনের ফুলের দাম দ্বিগুণ।