নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য গণতন্ত্রের নীতি ও মূল্যবোধ পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ ধরনের মন্তব্যের জন্য ফখরুলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলেও জানান তিনি।
শনিবার এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়ার জন্য বর্তমান ইসির বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব।
ঠাকুরগাঁওয়ে শুক্রবার নিজ বাসভবনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব কি না এটা পরে সিদ্ধান্ত নেব। কারণ এ দেশে মামলা করে লাভ হয় না। বিচার বিভাগ এখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন শুধু একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানই নয়, এটি বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য রেগুলেটরি বডি বা রেফারির মতো। খেলায় কোনো দল খারাপ খেললে অনেক ক্ষেত্রেই তারা রেফারিকে দোষারোপ করে। বিএনপির অবস্থাও অনেকটা সেরকম। খেলায় পরাজিত হয়ে অথবা খেলায় অংশ না নিয়ে রেফারিকেই দোষারোপ করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’
কাদের বলেন, ‘একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির তোয়াক্কা না করে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিষেদাগার করছে। এ জন্য বিএনপির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। ’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশনের প্রতি এরূপ অসৌজন্যমূলক আচরণ দেশের সংবিধান পরিপন্থী।
‘যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কেউ না কেউ সংক্ষুব্ধ হতে পারে। এ সংক্ষুব্ধতা প্রকাশের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি রয়েছে। সেই পথে না গিয়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ জাতীয় বিষোদগার রাষ্ট্র, সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভিত্তিমূলে আঘাত।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালের সংবিধানে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান সংযোজিত হয়। সে সময় বিশ্বের অনেক দেশেই নির্বাচন পরিচালনার বিষয়টি নির্বাহী বিভাগের হাতে রাখা হতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাচন পরিচালনার সর্বময় ক্ষমতা একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের ওপর দেন।
‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খুনি মোশতাক, জিয়া চক্র অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর নির্বাচন কমিশনকে ধ্বংস করে। স্বৈরশাসক জিয়া অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেয়ার অভিপ্রায়ে ১৯৭৭ সালের ৩০ মে হ্যাঁ/না ভোটের আয়োজন করেন।’
ওবায়দুল কদের বলেন, ‘তার পক্ষে হ্যাঁ ভোট প্রদানের সব আয়োজন সম্পন্ন করে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে এক নিকৃষ্টতম প্রহসনে রূপ দেন। জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন পরবর্তী স্বৈরশাসক এরশাদ ও খালেদা জিয়া।
‘১৯৯১ সালে দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের পর খালেদা জিয়া একইভাবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে কলুষিত করে তোলেন। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালে গঠিত অন্তত দুটি নির্বাচন কমিশনকে (কে এম সাদেক ও এম এ আজিজ) বিদায় নিতে হয়েছে জনরোষের মুখে। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টায় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করে বিএনপি। দলীয় লোককে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করতে বিচারপতিদের বয়সসীমা বাড়ানো হয়।’
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘২০০১-পরবর্তী সময়ে প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করা হয়। ছাত্রদলের ক্যাডারদের নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থার কফিনে পেরেক ঠুকে ক্ষমতা জবরদখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় বিএনপি।
‘বিপরীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সৃষ্ট গণআন্দোলন ও দাবির মুখে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত হওয়ায় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বিএনপির নির্বাচনী রাজনীতি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আছে, থাকবে। সংবিধানসম্মতভাবে যথাসময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ আবারও রাষ্ট্র পরিচালনায় থেকে উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।’