শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
হামলার ২৭ দিন পর শিক্ষামন্ত্রীর পরামর্শে শনিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা আহত হয়েছেন, তাদের সবার প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। ওই ঘটনার ধারাবাহিকতায় সৃষ্ট অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনতে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষা উপমন্ত্রীসহ সরকারের সব স্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তি, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ সিলেটের সুশীল সমাজের সবাইকে এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা নিরসনে মিডিয়া কর্মীরা যারা দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছেন, তাদেরকেও জানাচ্ছি ধন্যবাদ।’
১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। ছবি: নিউজবাংলা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
ফরিদ বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের এই প্রিয় প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা সম্ভব হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি শুক্রবার ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলাসহ চলমান ঘটনায় উপাচার্যকে এ পরামর্শ দেন।
শাবি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ১৬ জানুয়ারি থেকে আন্দোলন শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে কথা বলতে ১১ ফেব্রুয়ারি সিলেটে যান শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল।
সার্কিট হাউসে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে দীপু মনি যান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানানোর আশ্বাস দেন।
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে ২৬ দিন পর বাসভবন থেকে বের হন শাবি উপাচার্য। ছবি: নিউজবাংলা
এরপর শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি। সেখানে যোগ দেন উপাচার্য ফরিদ। নিজ বাসভবনে অবরুদ্ধ থাকার ২৬ দিন পর তিনি এই প্রথম বের হন।
বৈঠক শেষে শাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে দুঃখ প্রকাশ করতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। উপাচার্যের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনার জায়গায় আমি থাকলেও এত দিনে দুঃখ প্রকাশ করতাম।’”
শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী।
১৬ জানুয়ারি থেকে উপাচার্য ফরিদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করেন। ২৬ জানুয়ারি জাফর ইকবালের আশ্বাসে তারা এক সপ্তাহের অনশন ভাঙেন।
এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদকে সরিয়ে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়, অসুস্থতার কারণে তাকে অপসারণ করা হয়েছে।
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে প্রক্টরের পদ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি আলমগীর কবীরকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে জহির উদ্দিন আহমদ ও আলমগীর কবীরের অপসারণও ছিল।