বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

একসঙ্গে বিধবা তারা ৫ জন

  •    
  • ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৩:৪৬

মুন্নী সুশীলের স্বামী খোকন বলেন, ‘আমার স্ত্রীর ভাইয়েরা সবাই অবস্থাসম্পন্ন ছিলেন। কেউ চাকরি করতেন, কেউ বিদেশে ছিলেন। শুধু একজনের স্ত্রী চাকরি করেন। সবার বাচ্চা ছোট। কীভাবে তাদের সংসার চলবে আর বাচ্চাদের পড়ালেখার কী হবে ভেবে কূল পাচ্ছি না।’

নতুন সাদা থান পরা, শাখা-সিঁদুরহীন পাঁচ নারী। তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে সাদা ধুতি পরা তিন শিশু। সবার হাতে বৃন্তছিন্ন আমপাতা। পাত্রের ‘শান্তি জলের’ মধ্যে রাখা পাতাগুলো তখনও বিবর্ণ হয়নি।

তবে প্রিয় মানুষের মৃত্যু চরম অনিশ্চয়তা ফেলেছে এই নারী ও শিশুদের। তাদের এই স্থিরচিত্র ছড়িয়েছে ফেসবুকে।

ছবিটি কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজার হাসিনাপাড়ায়, পিকআপ ভ্যানের চাপায় নিহত পাঁচ ভাইয়ের বাড়ির। এই পরিবারের প্রতি নানাভাবে শোক জানাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ।

অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক সুরেশ চন্দ্র সুশীলের শ্রাদ্ধের এক দিন পর একই প্যান্ডেলে শুক্রবার তার ছেলেদের শ্রাদ্ধ হয়েছে।

গত ৩০ জানুয়ারি মৃত্যু হয় সুরেশের। তার শ্রাদ্ধের জন্য সাত ছেলে ও দুই মেয়ে এসেছিলেন বাড়ি। মঙ্গলবার ভোরে শ্রাদ্ধের আগে নয় ভাইবোন যাচ্ছিলেন চকরিয়ার ফকিরশাহ হাসিনাপাড়ার তিনরাস্তার মন্দিরে।

মালুমঘাটের ফকিরশাহ এলাকায় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হওয়ার সময় পিকআপ ভ্যানের চাপায় পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যু হয়। আহত দুই ভাইবোন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এই দুর্ঘটনায় অক্ষত আছেন ১৯ বছর বয়সী প্লাবন সুশীল। একসঙ্গে পাঁচ ভাইকে হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তাদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, প্যান্ডেলের এক পাশে পাঁচ ভাই অনুপম সুশীল, নিরুপম সুশীল, দীপক সুশীল, চম্পক সুশীল ও স্মরণ সুশীলের বাঁধানো ছবি। সবার ছবিতে ফুলের মালা। পুরোহিত শ্রাদ্ধ পরিচালনা করছেন। একে একে এসে ধর্মীয় আচার পালন করছেন সদ্য বিধবা পাঁচ নারী ও বাবা হারানো শিশুরা।

শ্রাদ্ধে ১ হাজার মানুষকে ভাত আর নিরামিষ খাওয়ানো হয়েছে।

১২ দিন আগে স্বামী ও তিন দিন আগে পাঁচ সন্তান হারানো ৬৫ বছরের মৃণালিনী সুশীল মানু জামাতা খগেশ চন্দ্র খোকনকে নিয়ে সব কাজ দেখাশোনা করছেন।

মানু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই প্রার্থনা, এমন বিপর্যয় যেন আর কোনো পরিবারে না আসে।’

এরপর বলতে থাকেন, ‘ভগবান এ কেমন পরীক্ষায় ফেলেছেন? দুই বছর আগে এক ছেলেকে অকালে হারালাম। স্বামী হারানোর ১০ দিনের মধ্যে সব হারালাম। এখন ভগবান ছাড়া আমাদের দেখার কেউই থাকল না।’

মুন্নী সুশীলের স্বামী খোকন জানান, চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছেন রক্তিম সুশীল। চার দিন ধরে তার জ্ঞান ফেরেনি। চট্টগ্রাম মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন প্লাবনের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।

বুধবার মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিষ্টান হাসপাতালে হীরা সুশীলের পায়ের অপারেশন হয়েছে। তার ডান পা ভেঙে গেছে। শরীরের বেশ কয়েক জায়গায় আঘাত পেয়েছেন।

খোকন বলেন, ‘আমার স্ত্রীর ভাইয়েরা সবাই অবস্থাসম্পন্ন ছিলেন। কেউ চাকরি করতেন, কেউ বিদেশে ছিলেন। শুধু একজনের স্ত্রী চাকরি করেন। সবার বাচ্চা ছোট। কীভাবে তাদের সংসার চলবে আর বাচ্চাদের পড়ালেখার কী হবে ভেবে কূল পাচ্ছি না।’

পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলছে পরিবার

সেদিনের দুর্ঘটনায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান মুন্নী সুশীল। তিনি বলেন, ‘আমরা সাত ভাই ও দুই বোন পিচঢালা রাস্তা থেকে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বেপরোয়া পিকআপ ভ্যানটি দ্রুত এসে আমাদের চাপা দেয়। তখন আমি ও প্লাবন ছিঁটকে পড়ি। তখন দেখি পিকআপটি পেছনে এসে আবার চাপা দেয়। পরিকল্পিত না হলে এটি পেছনে এসে আবার কেন চাপা দিল?’

এ বিভাগের আরো খবর