নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার বিশিষ্ট বাউলশিল্পী ইসলাম উদ্দিন আর নেই।
কেন্দুয়ার সান্দিকোনা ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি মারা যান।
প্রায় তিন বছর আগে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন এ লোকশিল্পী।
বাউলশিল্পী ইসলাম উদ্দিন ১৯৫৬ সালে খিদিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে মামা রঙ্গু মিয়ার কণ্ঠে বাউল গান শুনে তিনি গানের প্রতি আসক্ত হন। এর পর প্রখ্যাত বাউল আবেদ আলীর শিষ্যত্ব নিয়ে বাউল গান ও বাউল শাস্ত্রের তালিম নেন।
সুমধুর কণ্ঠ ও বিশেষ গায়কির কারণে কৈশোরেই তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে লোকগানকেই বেছে নেন জীবিকার অবলম্বন হিসেবে।
পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চলে ‘মালজোড়া বাউল’ নামে জনপ্রিয় ধারাটিকে শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছিলেন যে কয়েকজন বাউলশিল্পী তাদের মধ্যে ইসলাম উদ্দিন ছিলেন অন্যতম।
বাউল শাস্ত্র ও বাউল তত্ত্ব সম্পর্কে অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন তিনি। ১৯৯২ সালে কেন্দুয়ার কুতুবপুর গ্রামের এক আসরে বাউল গান গেয়ে জননন্দিত কথা সাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের নজরে আসেন তিনি। পরে হয়ে ওঠেন তার ঘনিষ্ঠ সহচর।
হুমায়ূন আহমেদের ‘উড়ে যায় বক পক্ষী’, ‘চন্দ্র কারিগর’, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘এনায়েত আলীর ছাগল’, ‘অদেখা ভুবন’, ‘চৌধুরী খালেকুজ্জামানের বিশ্ব রেকর্ড’, ‘চৌধুরী খালেকুজ্জামানের এভারেস্ট জয়’, ‘থ্রি-টু-ওয়ান জিরো অ্যাকশান’সহ ১৩টি নাটক, দুটি চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ও ‘নয়ন নম্বর বিপদ সংকেত’ এবং তিনটি বিজ্ঞাপন চিত্রে গান ও অভিনয় করেছেন ইসলাম উদ্দিন।
তার অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নব্বই দশক ও পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে পরিচিতি পান এ বাউল শিল্পী।
একাধিকবার গান করেছেন দেশের বাইরেও। জারিগানের বয়াতি হিসেবেও তিনি সুপরিচিত।
একজন গীতিকার, লেখক ও পল্লী সংস্কৃতি সংগ্রাহক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন ইসলাম উদ্দিন।
তার রচিত প্রায় সহস্রাধিক গান আজও অপ্রকাশিত। গানের পাশাপাশি কয়েকটি গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করলেও অর্থাভাবে সেগুলো প্রকাশ করতে পারেননি এ শিল্পী।
তার উল্লেখযোগ্য পাণ্ডলিপিগুলো হচ্ছে- ‘নেত্রকোণার লোকসাহিত্য’, ‘নেত্রকোণার আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’, ‘শাফিউল মজনবীন’, ‘পদ্যাকারে মহানবীর জীবনী’ এবং নাটিকা ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’।
বিকেল ৫টার দিকে সান্দিকোনা স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জানাজার পর নিজ গ্রামের কবরস্থানেই তাকে দাফন করা হবে।