বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাজার গরম আজিমের আগুন পানে

  •    
  • ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০৮:৪৬

স্থানীয় বজ্রপুর গ্রামের তাসের হোসেনের ছেলে ৩৫ বছর বয়সী আজিম প্রায় ১৫ বছর ধরেই নানা স্বাদের পান বিক্রি করে আসছেন। ১ বছর ধরে শুরু করেছেন আগুন পানের ব্যবসা।

শুধু পান খেয়েই মুখ পুড়ে যায় অনেকের। অথচ পানের মধ্যে জ্বলন্ত আগুন, তা খেয়েও মুখ পুড়ছে না মানুষের! এর বদলে সারা মুখ ছেয়ে যাচ্ছে মিষ্টি আর সুঘ্রাণে!

পুরান ঢাকার সদরঘাটের এমন বিচিত্র পানের কথা কে না জানে? তবে আগুনমাখা এমন পানে সম্প্রতি বাজার গরম করেছেন নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আজিম হোসেন। উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের বজ্রপুর বাজারেই তার বাহারি পানের দোকান।

এই দোকানের পানকে আজিম মামার পান হিসেবেই চেনে বাজারের লোক। নানা রং আর মসলাযুক্ত এসব পানে থাকে প্রায় অর্ধশত উপকরণ। মিষ্টি আর সুঘ্রাণযুক্ত এসব পানের নতুন আকর্ষণ আগুন!

মুখে পুরে দেয়ার আগে মিষ্টি পানে আগুন জ্বেলে দেয়া হয় বলেই এর নাম হয়েছে আগুন পান। এই পান খেতে এখন ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। দূর-দূরান্ত থেকেও আসছেন অনেকে।

পান বানাচ্ছেন আজিম হোসেন। ছবি: নিউজবাংলা

বজ্রপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আজিমের দোকানের সামনে কাচের কৌটায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে পানের নানা উপাদান। এসবের মধ্যে আছে চকলেট, বাদাম, নারকেল, গুলতান চাটনি, চকলেট ক্রিম, ভ্যানিলা ক্রিম, স্ট্রবেরি ও অরেঞ্জ জেলি, পেঁপে ভাজি, টুটিফুটি, মোরব্বা, কোরমা, সুইট বল দানা, কালিজিরা, তবক, সুপারি, লবঙ্গ, একাঙ্গী, চুনসহ আরও নানাকিছু।

দোকানে বসে পান তৈরি করছিলেন আজিম হোসেন। একটি বড় আকৃতির পান পাতার ওপর একে একে মসলা সাজালেন। এর ওপর ঢেলে দিলেন বিশেষ এক তরল পদার্থ। পরে সেটিতে লাইটার স্পার্ক করাতেই জ্বলে উঠল আগুন। মসলাসহ জ্বলন্ত এই পানকে ভাঁজ করে নিজ হাতেই ক্রেতাদের মুখে পুরে দেন আজিম।

স্থানীয় বজ্রপুর গ্রামের তাসের হোসেনের ছেলে ৩৫ বছর বয়সী আজিম প্রায় ১৫ বছর ধরেই নানা স্বাদের পান বিক্রি করে আসছেন। ১ বছর ধরে শুরু করেছেন আগুন পানের ব্যবসা।

আগুন পান এর আগে কখনও খাইনি। এই প্রথম খেলাম। একটা অন্যরকম স্বাদ আছে এই পানে। নানা রকম মসলা দিয়ে তৈরি করা হয়। খেতে আসলেই অনেক মজা।

আজিম জানান, এক বছর আগে ঢাকার সদরঘাটের একটি পানের দোকান থেকে আগুন পানের ব্যবসাটি শিখেছেন। এর জন্য বিশেষ জাতের পান সংগ্রহ করা হয় বগুড়া থেকে। আর মসলা আসে ভারত থেকে।

পানে আগুন জ্বালিয়ে পরিবেশনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগুন দিলে পানের মসলাগুলো আরও ভালোভাবে মিশে যায়। তৈরি হয় স্মোকি ফ্লেভার। তাই এর স্বাদ অন্য পান থেকে আলাদা।

আজিমের দোকানে সাধারণ আগুন পানের দাম ২০ টাকা। আর মসলাভেদে বিশেষ পানের দাম ৪০ টাকা। এ ছাড়া দোকানে অন্যান্য পান ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্তও আছে। এর মধ্যে শাহজাদী ১৫, বোম্বে মাসালা খিলি ২৫ টাকায় বিক্রি হয়। তবে আগুন পানই এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসা ভালো হচ্ছে জানিয়ে আজিম জানান, এই দোকান দিয়েই বউ, সন্তান, মা-বাবাকে নিয়ে তার সংসার চলে।

পান খেতে আসা নাজমুল হক বলেন, ‘আগুন পান এর আগে কখনও খাইনি। এই প্রথম খেলাম। একটা অন্যরকম স্বাদ আছে এই পানে। নানা রকম মসলা দিয়ে তৈরি করা হয়। খেতে আসলেই অনেক মজা। পান মুখে দিলেই আগুন নিভে যায়। তখন গরম গরম খাবারের যে স্বাদ পাওয়া যায়, পানেও সেই স্বাদ লাগে।’

নওগাঁ শহর থেকে ব্যক্তিগত কাজে বজ্রপুর বাজারে এসেছেন মোশারফ দেওয়ান। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে আজিম মামার আগুন পান মুখে দিয়ে তিনি বলেন, ‘পান আমি প্রায় ২০-২২ বছর ধরে খাচ্ছি। তবে আগুন পান এর আগে কখনো খাওয়া হয়নি। এই প্রথম আগুন পানের স্বাদ নিলাম। অন্য রকম একটি স্বাদ অনুভব করলাম। সত্যি আগুন পানের প্রেমে পড়ে গেছি। ভাবছি মাঝে মাঝে এই পান খাব।’

নওগাঁ সিভিল সার্জন অফিসের চিকিৎসা কর্মকর্তা আশিষ কুমার সরকার জানান, আগুন পান মূলত গ্লিসারিন পার পটাশিয়াম ও পানির মিশ্রণে তৈরি হয়। আর মানুষের শরীরের ভেতরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে আগুন পানের তাপ বেশি থাকবে। সে ক্ষেত্রে মুখের ভেতরের কোষগুলো পুড়ে যেতে পারে। নিয়মিত খেলে ক্যানসারও হতে পারে খাদ্যনালিতে। তাই আগুন পান মুখে দিতে সাবধান থাকতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর