বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাকা নগর পরিবহন: এক সেবায় দুই নীতি

  •    
  • ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০৮:৩৩

বিআরটিসি ও বেসরকারি কোম্পানির বাসচালকদের মধ্যে সুযোগ-সুবিধার পার্থক্য দেখা গেছে। আর্থিক সুবিধা কম থাকায় বিআরটিসি বাসের চালকরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। এতে তাদের মধ্যে নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া যাত্রী তোলার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। এই যাত্রীদের ভাড়া হিসাবে যোগ হচ্ছে না; চলে যাচ্ছে চালকের পকেটে।

দুই কোম্পানির ৫০টি বাস দিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকা নগর পরিবহনের পাইলট প্রকল্প। বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশনের এ প্রকল্পে দুই কোম্পানির বাসের চালকদের সুবিধাগত বৈষম্য শুরু হয়েছে।

ট্রান্সসিলভার চালক ও সহকারীকে খাওয়ার জন্য ৫০০ টাকা দেয়া হচ্ছে, তবে এ টাকা পাচ্ছেন না বিআরটিসি বাসের চালকরা। এ ছাড়া ট্রান্সসিলভার বাসে চালকের সহকারী থাকলেও নেই বিআরটিসি বাসে। এ বিষয়ে বিআরটিসির কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে যাত্রা শুরু হয় ঢাকা নগর পরিবহন নামে ফ্র্যাঞ্চাইজি বাসের পরীক্ষামূলক চলাচল। প্রথমে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে ঢাকা-চিটাগং রোডের কাঁচপুর পর্যন্ত চালু হয় একটি রুট। দ্বিতীয় ধাপে আরও তিনটি রুট চূড়ান্ত হয়।

এই বাসে যাতায়াত বেশ সাশ্রয়ী এ কারণে যে, এখানে যাত্রী যত কিলোমিটার দূরত্বে যাবে, তত কিলোমিটারের ভাড়াই দিতে হয়। ওয়ে বিলের নামে যাত্রী ঠকানোর পদ্ধতি এখানে নেই।

যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামায় দীর্ঘদিনের যে সমস্যা রয়ে গেছে, সেটিও এখানে থাকবে না বলে জানানো হয়েছে। যদিও চালুর এক মাস পরই এ ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখা গেছে।

অন্যান্য বাসের মতোই যেখানে খুশি সেখানেই যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা যাচ্ছে। কাউন্টার ছাড়া যাত্রী ওঠানোর কারণে এই টাকাটা চলে যাচ্ছে গাড়িতে থাকা চালকদের পকেটে। আবার সম্পূর্ণ নতুন বাস নামানোর কথা থাকলেও পুরোনো বাসই মেরামত করে চালানো হচ্ছে।

বাসগুলো এখন ধুলা-ময়লায় ঠাসা। সড়কের পাশে যাত্রীছাউনি থাকার কথা থাকলেও অনেক জায়গায় তা এখনও দেখা যায়নি। আবার অনেক জায়গায় পুরাতন ভাঙাচোরা যাত্রীছাউনি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।

এর মধ্যে আবার নতুন একটি অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সেটি হলো বিআরটিসি ও বেসরকারি কোম্পানির চালকদের মধ্যে সুযোগ-সুবিধার পার্থক্য।

আর্থিক সুবিধা কম থাকায় বিআরটিসি বাসের চালকরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। এতে তাদের মধ্যে নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া যাত্রী তোলার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। এই যাত্রীদের ভাড়া হিসাবে যোগ হচ্ছে না; চলে যাচ্ছে চালকের পকেটে।

সুযোগ-সুবিধায় অনেক পার্থক্য

বিআরটিসির এক চালক জানান, ট্রান্সসিলভার চালক-হেলপারদের প্রতিদিন বেতনের বাইরে খাবারের জন্য ৫০০ টাকা দেয়া হয়, তবে তাদের কোনো টাকা দিচ্ছে না। তাদের বলা হয়, ‘আপনারা চাকরি করেন বিআরটিসির।’

তিনি বলেন, ‘নগর ভবনে আমরা মিটিংয়ে এটা বলছিলাম যে, অন্তত আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করে দেন, তবে এখন পর্যন্ত এরও কোনো সুরাহা হয় নাই। আমি ছোট মানুষ। তাই এটা নিয়ে কিছু বলতে গেলে আমার চাকরি থাকবে না।’

দুই ট্রিপের বেশি ট্রিপ দিলে ট্রান্সসিলভার চালক ও সহকারীকে নিয়মিত বেতনের বাইরে খাবারের ৫০০ টাকা ছাড়াও আরও ৫০০ টাকা দেয়া হয়।

সে সুবিধা পান না জানিয়ে বিআরটিসির সেই চালক বলেন, ‘আজকে গাড়ি চালালে কালকেই এই টাকাটা পাবে। এর পরে মাস শেষে বেতন তো পাচ্ছেই। আর আমরা শুধু বেতনটাই পাই, যা দিয়ে আমাদের চলে না।’

তিনি বলেন, ‘বেতন পাই মাত্র ১৭ হাজার টাকা। এই টাকায় ঢাকায় পরিবার নিয়ে থাকা কি আসলেই সম্ভব? ছেলে ক্লাস এইটে পড়ে। সংসার চালিয়ে তার পড়াশোনার খরচ চালানো কি এই টাকায় সম্ভব?’

আবার ট্রান্সসিলভার ২০টি বাসে সহকারী থাকলেও বিআরটিসির ৩০টি বাসে কোনো সহকারী নেই।

এ নিয়ে বিআরটিসির এক বাসচালক বলেন, ‘একজন হেলপার থাকলে শব্দ করলে বা কথা বললে কিন্তু ঘুমের ভাব কেটে যায়। সিটিতে ট্রান্সসিলভার গাড়ি চালকদের কাজ করা সহজ; আমাদের জন্য কঠিন।’

বিআরটিসির চালকদের বিশ্রামের অভাব বলেও জানান এ চালক।

তিনি বলেন, ‘বিআরটিসির নিয়মে এক দিন গাড়ি চালালে এক দিন রেস্ট। এদিকে ড্রাইভার সংকটের কারণে ডিপার্টমেন্টের স্বার্থে আমাদের প্রতিদিনই গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এর জন্য বাড়তি কোনো টাকা নাই; বেতন যা তাই।’

গাড়ির ক্ষতি হলে ‘কাটা হয় ড্রাইভারের বেতন’

চলার পথে লুকিং গ্লাস ভাঙলে মাস শেষে বেতন থেকে কেটে রাখা হয় জানিয়ে সেই চালক বলেন, ‘আমরা চাকরি করতেছি না জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে পড়ে আছি এটাই বুঝতেছি না। পাবলিক গাড়ি চালালে মাসে অন্তত ৩০ হাজার টাকা ইনকাম করা যায়। এর উপরে যদি বেতন কাটা হয় কীভাবে বাঁচব।’

কী বলছে কর্তৃপক্ষ

দুই নীতির কারণ জানতে চাইলে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক ও বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন কমিটির সদস্য সচিব নীলিমা আখতার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আপনার পেমেন্ট স্টাইল আর আমার পেমেন্ট স্টাইল কী এক? এখন আমি একই বেতন দাবি করতে পারব? এটা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। যে সিস্টেম হয়ে উঠেছে অনেক দিন ধরে, সেটা ভাঙতে তো আমার সময় লাগবে।’

দুই বাসচালকরা একই কাজ করছে। এখানে দুই নীতি কেন থাকবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিআরটিসির নিজস্ব পে স্ট্রাকচার আছে। বিআরটিসির চালকদের ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেড আছে। যে চালক পাঁচ বছর ধরে চাকরি করছেন, তার বেতন এক রকম। যিনি ১০ বছর ধরে চাকরি করছেন, তার বেতন আরেক রকম।”

সদস্য সচিব নীলিমা আখতার আরও বলেন, ‘তারা ইনস্টিটিউশনের কাঠামোতে বেতন পান। সেটাই আমরা করতে চাচ্ছি। বিআরটিসির ড্রাইভার তো বেশি লাভবান। সরকারি ড্রাইভারদের ক্যাশ টাকা দেয়ার নিয়ম নেই।’

তিনি বলেন, ‘আপনার দেয়া তথ্য নোট নিলাম। যেটা হবে অভিন্ন হবে, এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। বেতন কাঠামো নিয়ে যেমন আগাচ্ছি, এ বিষয় নিয়েও কাজ করা হবে।’

গাড়ির ক্ষতি হলে চালকদের বেতন কাটার বিষয়ে নীলিমা আখতার বলেন, ‘লুকিং গ্লাস ভাঙলে বেতন থেকে টাকা কেটে রাখে এটা আমার এখতিয়ার না। এটা বিআরটিসি বলতে পারবে। বিআরটিসির ড্রাইভারকে কখনই দোষ দেয়া যাবে না, সে ইচ্ছা করে গাড়ির কিছু ভেঙেছে। কেউই ইচ্ছা করে দুর্ঘটনা ঘটাতে চায় না।’

তিনি বলেন, ‘এটি বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশনের পাইলট প্রজেক্ট। এটা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তী রুটগুলো আমরা আরও সুন্দর করব।’

যা বলছে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ

বিআরটিসির চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব তাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের গাড়ি অটো। ড্রাইভার গাড়ির দরজা বন্ধ ও খুলতে পারেন। আমাদের লোকবলের স্বল্পতা রয়েছে।

‘গাড়ি এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে গিয়ে থামবে। প্রতি গাড়িতে সহকারী দেয়ার চেষ্টা করছি।’

চালকদের বেতন কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যদি ড্রাইভারের অবহেলার কারণে অঘটন ঘটে থাকে, সেটার ভিত্তিতে বিভাগীয় মামলা হয়। বিভাগীয় আইনেই এই ক্ষমতা দেয়া আছে। সে যদি তার অদক্ষতার কারণে গাড়ির ক্ষতি করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ভালো নাকি সে লুকিং গ্লাস লাগিয়ে দিলে এটা ভালো হয়?’

‘চালক কি ইচ্ছা করে গাড়ির ক্ষতি করে?’

জবাবে বিআরটিসির কর্মকর্তা বলেন, ‘তাহলে দুর্ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে? ড্রাইভারের অদক্ষতার কারণে হচ্ছে না? গত মাসে কয়েকজনের চাকরি আমি খেয়ে দিয়েছি।’

ট্রান্স সিলভার চালক ও সহকারীদের খাবারের জন্য ৫০০ টাকা দেয়া হচ্ছে, কিন্তু বিআরটিসির চালক ও সহকারীদের এই টাকা না দেয়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেন দেব? তারা তো সরকারের স্কেল অনুযায়ী বেতন, ভাতা, বোনাসসহ সকল সুযোগ-সুবিধা পায়। সোমবারের মিটিংয়েও এই কথা উঠেছিল। এগুলোর কোনো সুযোগই নাই।’

দুই নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো ধরনের বৈষম্য থাকবে না, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তাদের শ্রম আইনেই সকল সুযোগ-সুবিধা ও বেতন দেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর