শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত প্রক্টরেরও অপসারণ চেয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এক দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইশরাত ইবনে ইসমাইল এই পদের দায়িত্ব নেয়ার পর তারা এ দাবি তুললেন।
তাদের অভিযোগ, নতুন প্রক্টরের সামনে একটি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছিল। সেটি প্রতিহত করার কোনো উদ্যোগ তিনি নেননি। এ কারণে তিনি প্রক্টর পদের জন্য অনুপযোগী বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
একই সঙ্গে তারা জানালেন, এক দিনের জন্য উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ও মন্ত্রীর ক্যাম্পাস সফর শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষে শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানিয়েছেন ইয়াসির সরকার।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে আলমগীর কবিরকে সরিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে প্রক্টর করা হয় ইশরাত ইবনে ইসমাইলকে।
এ বিষয়ে ইয়াসির বলেন, ‘নবনিযুক্ত প্রক্টরের সামনে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করা হয়েছিল। তবে তিনি সে সময় ঘটনাটি প্রতিহত করার কোনো উদ্যোগ নেননি। ওই ঘটনা এখন তদন্তাধীন। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাকে (ইশরাত ইবনে ইসমাইলকে) দেয়া অনুচিত হয়েছে।
‘তাকে অপসারণের জন্য আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছি। মন্ত্রী আমাদের এ ব্যাপারে যথাযত উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া আগামীতে প্রক্টর নিয়োগে শিক্ষার্থীদের মতামত নেয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী।’
চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে ইয়াসির বলেন, ‘আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আটটি দাবি জানিয়েছি। এর মধ্যে আমাদের প্রধান দাবি উপাচার্যের পদত্যাগ ছাড়া বাকি সবগুলো ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন মন্ত্রী। এগুলো দ্রুত পূরণের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। উপাচার্যের অপসারণ যেহেতু তার এখতিয়ারভুক্ত নয়, তাই বিষয়টি তিনি আচার্যকে অবহিত করবেন বলে জানিয়েছেন।’
ক্যাম্পাসে গিয়ে শাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। ছবি: নিউজবাংলাতিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি মহামান্য আচার্য শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে আমাদের অভিযোগগুলো জেনে উপাচার্যকে দ্রুত অপসারণে উদ্যোগ নেবেন। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর আমাদের করণীয় নির্ধারণে আগামীকাল (শনিবার) বিকেলে সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে আমরা বৈঠক করব। এই বৈঠকের পর আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাব। এর আগ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত থাকবে।’
শুক্রবার দুপুরে সার্কিট হাউসে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে যান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তিনি জানান, রাষ্ট্রপতির কাছে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি তুলে ধরবেন। উপাচার্যের নিয়োগ ও অপসারণ রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারভুক্ত। এ কারণে রাষ্ট্রপতিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।
উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষক ও উপাচার্যের সঙ্গে প্রায় ১০ মিনিটের বৈঠক করেন দীপু মনি। এরপর তিনি ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যান।
ওই বৈঠকে যোগ দিতে নিজ বাসভবন থেকে ২৬ দিন পর বের হন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
তবে ওই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি মন্ত্রী ও উপাচার্য।
পরে নিউজবাংলাকে রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রী আলোচনায় শিক্ষকদের প্রতি ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি উপাচার্যকে তার দায়িত্ব পালন চালিয়ে যেতে বলেছেন।’
শাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। ছবি: নিউজবাংলাকোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মন্ত্রী বলেছেন, উপাচার্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ তুলেছে তার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে রাষ্ট্রপতিই সব সিদ্ধান্ত দেবেন।’
শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী।
১৬ জানুয়ারি থেকে উপাচার্য ফরিদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করেন। ২৬ জানুয়ারি জাফর ইকবালের আশ্বাসে তারা এক সপ্তাহের অনশন ভাঙেন।
সে সময় সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য জাফর ইকবালের কাছে তারা পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো ছিল উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগসহ ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদ ও প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ, ক্যাম্পাসের সব আবাসিক হল সচল রাখার বিষয়ে উদ্যোগ, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অর্থ সাহায্য দেয়া, পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীর জামিন ও অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং অনশনরত শিক্ষার্থী ও উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশের হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ভার বহন।
শাবি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার পরই শুরু হয় উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন। ছবি: নিউজবাংলাএর মধ্যে সেদিনই জামিন পান গ্রেপ্তার সাবেক শিক্ষার্থীরা, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খরচও দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এরপর গত রোববার ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদকে সরিয়ে দেয়া হয়। সবশেষ প্রক্টর আলমগীর কবিরকে বৃহস্পতিবার রাতে অব্যাহতি দেয়া হয়।