মামার জন্য অনলাইনে ট্রেনের চারটি টিকিট কেটেছিলেন সোহেল রানা। কিন্তু স্টেশনে গিয়ে এই টিকিটের প্রিন্ট নিতে পারেননি। স্টেশন থেকে জানানো হয় সার্ভারের সমস্যার কারণে প্রিন্ট হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত প্রিন্টের কাগজ ছাড়াই ট্রেনে ওঠেন চারজন। তাদের টিকিটের বিপরীতে যে আসন, গিয়ে দেখেন, তাতে বসে আছেন অন্য যাত্রীরা। তাদের কাছেও টিকিট আছে।
এ নিয়ে বাদানুবাদের একপর্যায়ে সেখানে আসেন রেলের কর্মকর্তারা। তারা জানান, সোহেল রানা যে চারটি টিকিট কেটেছিলেন, সেগুলো ফেরত দেয়া হয়েছে। এ কারণে অন্য যাত্রীদের কাছে এই টিকিট বিক্রি করা হয়েছে।
সোহেল জানান, তিনি টিকিট ফেরত দিতে যাননি।
তাহলে ফেরত দিল কে? রেলওয়েরই কেউ এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ তার।
সোহেল রানার বাড়ি রাজশাহীতে। মঙ্গলবার দুপুরে তার মামা মো. নাদিম বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে রাজশাহী আসতে চাইছিলেন। কিন্তু আসা আর হয়নি। এর কারণ, টিকিট কেলেঙ্কারি।
ট্রেন থেকেই নাদিম জানিয়েছেন, শুধু তাদের টিকিটের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা নয়, আরও কয়েকজনের সঙ্গেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ট্রেনে তিনি এ রকম আরও চারজনকে দেখেছেন।
সোহেল জানান, তার মামার পরিবারের জন্য তিনি মঙ্গলবারের ঢাকা-রাজশাহী বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে ‘গ’ বগির ৩৯, ৪১, ৪৩ ও ৫১ নম্বর আসনের টিকিট কেটেছিলেন। ২ হাজার ৯০০ টাকায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে তিনি এসি কোচের এসব টিকিট কাটেন অনলাইনে।
৫ ফেব্রুয়ারি সোহেল তার এক কর্মচারীকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের কাউন্টারে টিকিট প্রিন্ট করতে পাঠান। কিন্তু তখন টিকিট প্রিন্ট হচ্ছিল না। তাই পরদিন ডাকা হয়। পরের দিন আবার গেলেও টিকিট প্রিন্ট হয়নি।
ট্রেনের টিকিট নিয়ে কালোবাজারি হয়। এ ধরনের সমস্যা আগে কখনও দেখিনি। এটা রেলেরই কেউ না করলে অন্য কেউ করতে পারবে না।
মঙ্গলবার সোহেলের মামা নাদিম কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে জানতে পারেন, তাদের টিকিটগুলো রিফান্ড করে নেয়া হয়েছে।
সোহেল রানা বলেন, ‘ট্রেনের টিকিট নিয়ে কালোবাজারি হয়। কিন্তু এ ধরনের সমস্যা আগে কখনও দেখিনি। এটা রেলেরই কেউ না করলে অন্য কেউ করতে পারবে না।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার (সিসিএম) আহসান উল্লাহ ভূঁঞা নিউজবাংলাকে বলেন, এ রকম ঘটনা তিনিও কখনও শোনেননি। তিনি এই প্রতিবেদকের কাছ থেকে আসন নম্বরগুলো নেন। জানান, টিকিট ছাড়া রিফান্ড করা যায় না। চলন্ত ট্রেনেই তিনি লোক পাঠিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারও বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা তিনি আগে শোনেননি। তিনি বলেন, ‘আমি প্রকৌশল বিভাগের লোক। এ ধরনের ঘটনা নিয়ে আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাও যাত্রীর টিকিট কীভাবে রিফান্ড হলো সেটা আমি দেখার চেষ্টা করব।’
সোহেল রানা জানান, এই ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার তাকে ফোন করেছিলেন। তিনি ঘটনাটি শোনার পর তাকে লিখিতভাবে জানাতে বলেছিলেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বিকেলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে এখনও এর কোনো সুরাহা হয়নি।