বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাদকের টাকায় বাবার নামে মাজার

  •    
  • ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৪:২৮

র‍্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত মনির নিজ বাড়ি শরীয়তপুরে কোটি টাকার স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এলাকায় প্রচারের উদ্দেশ্যে মাদক কারবারের টাকা দিয়ে তার বাবার কবরের ওপর চাতক শাহ নামে একটি মাজার নির্মাণ করেছেন।’

জীবিকার প্রয়োজনে ১৯৯৫ সালে ঢাকায় এসেছিল আব্দুল্লাহ মনির ওরফে পিচ্চি মনিরের পরিবার। রাজধানীতে ফলের ব্যবসা শুরু করেন মনিরের বাবা। তার সঙ্গে দোকানে বসতেন মনির।

সেই দোকান থেকেই পরিচয়ের জেরে পুরান ঢাকার স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে মনিরের। এর একপর্যায়ে তিনি জড়িয়ে পড়েন চুরি, ছিনতাইয়ে। পরে শুরু করেন অস্ত্র কারবারও।

শুরুতে রাজধানীর আটটিরও বেশি এলাকায় কয়েকজন খুচরা কারবারির কাছে মাদক সরবরাহ করতেন মনির। পরবর্তী সময়ে বড় মাদক কারবারি হয়ে ওঠেন পিচ্চি মনির। মাদকের সেই টাকা দিয়ে তিনি নিজ এলাকা শরীয়তপুরে বাবার নামে মাজার নির্মাণ করেছেন।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে শুক্রবার দুপুরে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে মনির ও তার সহযোগী জুবায়ের হোসেনকে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় দুটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, ১২টি গুলি, ১৮ হাজার ৭৭০টি ইয়াবা বড়ি, ছয় গ্রাম আইস এবং মাদক বিক্রির ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

র‌্যাব জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনির মাদক ও অস্ত্র কারবারে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

বাহিনীর কমান্ডার মঈন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব-২-এর একটি দল রাজধানীর হাজারীবাগের মধুবাজারের একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায়। অভিযানে মাদক কারবারের অন্যতম হোতা আব্দুল্লাহ মনির ওরফে পিচ্চি মনির ও জুবায়ের হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জব্দকৃত অস্ত্র, গুলি, টাকাসহ অন্যান্য সামগ্রী। ছবি: নিউজবাংলা

যেভাবে উত্থান মনিরের

র‌্যাব কমান্ডার জানান, মনিরের পরিবার জীবিকার জন্য ১৯৯৫ সালে ঢাকায় আসে। লালবাগ শহীদনগর এলাকায় বসবাস শুরু করে তারা। ফলের ব্যবসা শুরু করেন মনিরের বাবা। তাকে সহযোগিতা করতেন মনির।

একসময় এলাকায় চুরি, ছিনতাইয়ে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে মনিরের। এভাবেই অপরাধ জগতে হাতেখড়ি হয় তার।

ধীরে ধীরে তিনি লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় অপরাধ চক্র গড়ে তোলেন। এ চক্র ব্যবহার করে তিনি মাদক কারবার শুরু করেন।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাদকের অর্থ লেনদেন

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বরাতে র‌্যাব জানায়, ২০১২ সালে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় মনির ও তার বন্ধু পার্টনারশিপে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। প্রথমে স্থানীয় মাদক ডিলারদের কাছ থেকে অল্প মাদকদ্রব্য কিনে খুচরা কারবারিদের কাছে বিক্রি করতেন তারা।

২০১৬ সালে কক্সবাজারের ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে মনিরের নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। এরপর টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে তার কাছে নিয়মিত ইয়াবা সরবরাহ করা হতো। মনির ও তার দলের সদস্যরা ঢাকা থেকে কক্সবাজারে গিয়ে মাদকের চালান নিয়ে আসতেন।

মূলত তারা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে অর্থ লেনদেন করতেন। শতকরা ২০ শতাংশ হারে অগ্রিম পেমেন্টের মাধ্যমে ইয়াবা ঢাকায় আনা হতো।

র‌্যাব আরও জানায়, মাদকের ডেলিভারি ও লেনদেন মনিরের ভাড়া বাসায় বা সুবিধামতো জায়গায় হতো। তিনি ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ভাড়াটিয়া ছদ্মবেশে মাদকের গোপন কারবার করতেন।

রাজধানীর আটটিরও বেশি এলাকায় মাদক কারবার

মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‌্যাব জানায়, তিনি প্রতি মাসে মাদকের কয়েকটি চালান কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসতেন। মিরপুর-১৩, ইসলামবাগ, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, আজিমপুরসহ আরও কয়েকটি জায়গায় খুচরা মাদক কারবারিদের কাছে সেগুলো সরবরাহ করতেন।

প্রত্যেক খুচরা কারবারির জন্য ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন মনির। কৌশলগত কারণে খুচরা কারবারিদের একে অপরের কাছে অপরিচিত রাখা হতো।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে হাতিরপুলে ভাড়া বাসা থেকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন মনির ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাতে গ্রেপ্তারের পর ছাড়াও পান তিনি।

মাদকের টাকায় বাবার নামে মাজার

কমান্ডার মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত মনির নিজ বাড়ি শরীয়তপুরে কোটি টাকার স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এলাকায় প্রচারের উদ্দেশ্যে মাদক কারবারের টাকা দিয়ে তার বাবার কবরের ওপর চাতক শাহ নামে একটি মাজার নির্মাণ করেছেন।’

অস্ত্র কারবার

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত মনির ২০১৮ সাল থেকে অস্ত্র কারবার শুরু করেন। তিনি ২০১৮ সালে অবৈধ পিস্তলসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। সাত মাস কারাগারেও ছিলেন।

২০২০ সালে অস্ত্র ও মাদক মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। এ সময় এক বছর কারাভোগ করতে হয় তাকে। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদকসংক্রান্ত তিনটি মামলা রয়েছে।

ইয়াবা-আইসের চালান বিমানে

র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে মনির বিভিন্ন উপায়ে ইয়াবা আনতেন।কখনো কখনো কক্সবাজার-টেকনাফের কারবারিরা নিজেরাই ঢাকায় এসে ইয়াবা দিয়ে যেতেন।

‘সর্বশেষ ইয়াবার চালান এসেছে বিমানে। সেই ইয়াবা আনা হয় কার্বন পেপারে প্যাঁচিয়ে। ২০০ পিস ইয়াবা প্যাকিং করে কারবারিদের মাধ্যমে রাজধানীর আটটি জোনে সরবরাহ করেছেন।’

বিমানে করে কীভাবে ইয়াবা আনা হয় জানতে চাইলে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমরা দুজনের এয়ার টিকিট পেয়েছি, যারা মনিরের কাছে ইয়াবা ও ৫০ গ্রাম আইস পৌঁছে দিয়েছে। মনিরের বক্তব্যে উঠে এসেছে বিমানেই এসেছিল সেই চালান, তবে সেটি তদন্তসাপেক্ষ।’

এ বিভাগের আরো খবর