হারানোর ৭০ বছর পর মাকে খুঁজে পেয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ঝারামপুরের ৮০ বছরের আব্দুল কুদ্দুছ। মাত্র ১০ বছর বয়সে মাকে হারিয়েছিলেন তিনি।
গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর মা ১১০ বছরের মঙ্গলুন্নেছাকে খুঁজে পেলেও ৫ মাসের মাথায় তাকে এবার চিরতরে হারালেন আব্দুল কুদ্দুছ।
উপজেলার আশ্রাববাদ গ্রামে ছোট মেয়ে ঝর্ণার বেগমের বাড়িতে বৃহস্পতিবার সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন মঙ্গলুন্নেছা।
কিন্তু শেষ বিদায়ে মাকে শেষবারের মতো দেখতে পারেননি আব্দুল কুদ্দুছ। কারণ স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে তিনি থাকেন রাজশাহীর বাঘমারার বাড়ুইপাড়া গ্রামে।
রাজশাহী থেকে নিজ বাড়ি নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রাম সলিমগঞ্জ ইউনিয়নে পৌঁছানোর আগেই দাফন সম্পন্ন হয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুদ্দুছ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামের কালু মুন্সির ছেলে। তিন ভাইবোনের মধ্যে কুদ্দুছ সবার বড়। তার দুই বোনের মধ্যে জোৎস্না আক্তার মারা গেছেন। কুদ্দুছ মুন্সির সাত বছর বয়সে তার বাবা কালু মুন্সি মারা যান। মঙ্গলুন্নেছা ১০ বছর বয়সী কুদ্দুছকে লেখাপড়া করাতে পাশের বাড়ির জামাই নবীনগর উপজেলার পুলিশ সদস্য আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে রাজশাহীর আত্রাই উপজেলায় পাঠান। সেখান থেকে কুদ্দুছ হারিয়ে যান।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, কুদ্দুছ হারিয়ে যাওয়ার পর আত্রাই উপজেলার সিংশাইর গ্রামের সাদেক মিয়ার নিঃসন্তান স্ত্রী তাকে লালন-পালন করেন। ৩০ বছর বয়সে বাগমারা উপজেলার সবেদ মিয়ার মেয়ে শুরুজ্জাহাসকে বিয়ে করে সেখানেই জীবনযাপন করছিলেন কুদ্দুছ মুন্সি। গত ১২ এপ্রিল আত্রাই উপজেলার সিংশাইর গ্রামের এমকে আইয়ূব নামের এক ব্যক্তি কুদ্দুছের হরিয়ে যাওয়ার ঘটনা ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করেন।
৫ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে আপলোড হওয়া ভিডিওর মাধ্যমে আইয়ূবের সঙ্গে যোগাযোগ করে কুদ্দুছের সঙ্গে দেখা করেন চাচাতো ভাইয়ের নাতি শফিকুল ইসলাম। কুদ্দুছের সঙ্গে তার মাকে ভিডিও কলের মাধ্যমে কথোপকথনের ব্যবস্থা করে দেন শফিকুল। কুদ্দুছের বাম হাতের কাটা দাগ দেখে চিনতে পারেন মা।
৭০ বছর পর মা, বোন ও আত্মীয়দের সন্ধ্যান পেয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বরই ছেলে-মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বৃদ্ধ মাকে দেখতে বোন ঝর্নার বাড়িতে যান আব্দুল কুদ্দুছ। সে সময় তিনদিন মায়ের সঙ্গেই কাটান তিনি।
গত ২ নভেম্বর স্ত্রী সাজেদা বেগমকে নিয়ে আবার মায়ের কাছে যান তিনি। ১২-১৩ দিন মায়ের সঙ্গে থাকার পর আর দেখা হয়নি তাদের। শুধু ফোনেই কথা হত।
আব্দুল কুদ্দুসের ছোট ছেলে হাফেজ সোহেল মুন্সী নিউজাবাংলাকে বলেন, ‘দাদির সঙ্গেই থাকতে চেয়েছিলেন বাবা। দাদিকে নিয়েও আসতে চেয়েছিলেন কাছে কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় হাঁটা চলাফেরা করতে পারতেন না।’
মাকে ফিরে পেয়ে আবার হারানোর পর আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘গত বছর অসুস্থ হলে মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। তখন কইছি, আমার মা ডাকিছে। আমি মার কাছে যাব। তখন হেরা (সন্তানেরা) বলিছে আমি পাগল। আমার বিশ্বাস ছিল যে, মা বেঁচে আছে। মাকে দেখার জন্যই আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু মা আমরে ছেড়ে এবার একেবারে চলে গেলেন।’