সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার বিচার দাবিতে সারা দেশে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে শুক্রবার এ আহ্বান জানান তারা।
সমাবেশে ডিআরইউয়ের সাবেক সভাপতি রাজু আহমেদ বলেন, ‘প্রতি বছর এক দিনের কর্মসূচি দিয়ে সাগর-রুনি হত্যার বিচার আদায় করা সম্ভব না। এ জন্য দরকার সারা দেশে জোরদার আন্দোলন।
‘আমি সাংবাদিক নেতাদের আহ্বান জানাব সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে সারা দেশে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার।’
অন্য সংগঠন এই দিনে কর্মসূচি না দেয়ায় সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, ‘শুধু ডিআরইউ কেন, আজ অন্য সংগঠন কোথায়?’
সভায় ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘আমরা আগেও প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি, তাতে কোনো কাজ হয়নি। স্মারকলিপি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবারও দেব। আমরা তাদের একটি ডেডলাইন দিতে বলব, কত দিনের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন দিতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যেসব সাংবাদিক সংগঠন আছে তারা আজ অন্তত একটা কর্মসূচি দিতে পারত। ডিআরইউ প্রাণের তাগিদেই এই কর্মসূচিগুলো একের পর এক দিয়ে যাচ্ছে। এটা শুধু সাগর-রুনির ক্ষেত্রে না, অন্য যে কোনো সাংবাদিকের ক্ষেত্রে ডিআরইউ কথা বলে।’
ডিআরইউ সভাপতি বলেন, ‘আমরা সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সোচ্চার আছি এবং থাকবো। আমরা সুনিশ্চিত যে একদিন এই বিচার পাব। আমরা হতাশ হতে চাই না, আমরা চাই বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করবে।’
মাছরাঙা টেলিভিশনের চিফ নিউজ এডিটর রাশেদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা আশা ছাড়তে চাই না। আমরা বিশ্বাস করি রাষ্ট্র এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করবে। তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের চিহ্ন পাওয়া গেছে তাদের নাম আমাদের সামনে প্রকাশ করতে বলব।’
সমাবেশে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, ‘দুজন সাংবাদিককে এক দশক আগে হত্যা করা হয়েছে। তাদের হত্যাকারীদের প্রশাসন এখনও গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ জানাচ্ছি। আদালত যদি এ বিচারের দিকে সুদৃষ্টি দেয় তবে সারা দেশের মানুষের প্রত্যাশার বিচার দ্রুত শেষ হবে।’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলাম খান তপু বলেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, ‘২০১২ সালের এ দিনে সাগর ও রুনি খুন হন। ওই বছর আমাদের প্রতিবাদের বছর ছিল। দফায় দফায় তদন্ত প্রতিবেদনের সময় বাড়ানো হয়েছে ৮৫ বার। হয়তো কয়েক দিন পরে সেটি ১০০ পার হয়ে যাবে। সেটি না করে আমরা দ্রুত বিচার চাই।’
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব শেখ মামুন বলেন, ‘সাগর-রুনির হত্যার ঘটনা নানা ভাবে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। সাগর-রুনি হত্যা, মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। কেন হয়নি এ প্রশ্নের জবাব রাষ্টের কাছে চাই।’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। এ ঘটনায় শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করা হয়। মামলাটি ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে তদন্ত করছে র্যাব।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ জানুয়ারি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সবশেষ তারিখ ছিল। কিন্তু সেদিন জমা দিতে না পারায় র্যাবের পক্ষ থেকে আবারও সময়ের আবেদন করা হয়। আদালত ২৩ ফেব্রুয়ারি নতুন তারিখ ঠিক করেন। এ নিয়ে ৮৫ বার পেছাল আলোচিত মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ।
শেরে বাংলা নগর থানায় করা মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আসামির সংখ্যা আট। অন্য আসামিরা হলেন- বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড এনাম আহমেদ (হুমায়ুন কবির), রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ।
আসামিদের প্রত্যেককে একাধিবার রিমান্ডে নেয়া হলেও তাদের মধ্যে কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।
প্রতিবাদ সমাবেশে ডিআরইউয়ের সদস্য সাংবাদিকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।