‘আপনি কাজটি ঠিক করলেন না, খুব খারাপ করলেন আমাদের সঙ্গে। আল্লাহ আপনার বিচার করবে, আপনি তিন দিনের মধ্যে এর ফল ভোগ করবেন। আপনি এত খারাপ মানুষ তা জানতাম না।’
সাত বছর আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জে হত্যা মামলার রায়ের পর সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে চিৎকার করে এসব কথা বলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল বাতেন।
ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৫ম আদালতের বিচারক ফায়েজুন্নেছা বৃহস্পতিবার দুপুরে চার আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় পড়ে শোনানোর পর এজলাস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
কেরানীগঞ্জের আগানগর বাঁশপট্টি এলাকায় ওয়াসিম নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন বিচারক ফায়েজুন্নেছা।
রায় শুনে আদালতের কাঠগড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল বাতেন ও পলক রহমান।
রায়ের পর সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম দস্তগীরের উদ্দেশে আসামি বাতেন চিৎকার করলেও তিনি এ সময় চুপ ছিলেন।
হত্যা মামলায় বাতেনের আইনজীবী বিশ্বনাথ ঘোষ বিশ্বজিৎ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাতেন কেন চিৎকার করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে এ কথা বলেছেন তা আমি জানি না।’
তবে তিনি বলেন, ‘হয়তো আসামির পরিবার বা আসামির সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কোনো কথা হয়েছিল।’
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম দস্তগীরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে আলম ও পাপ্পু।
মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামির মধ্যে বাতেন ও আলম কারাগারে আছেন।
রায় ঘোষণার আগে তাদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণা শেষে আবার তাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্য দুই আসামি পলাতক। আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছে।
২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল আগানগর বাঁশপট্টি এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পাওয়ার স্টেশনের পেছন থেকে গলাকাটা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় পুলিশ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করে। পরে পুলিশ তদন্ত করে মরদেহের পরিচয় জানতে পারে। তদন্তের পর আসামিদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আসামিরা জানান, বাঁশ ব্যবসায়ী আলমকে ক্লাব থেকে বের করে দেন ভিকটিম ওয়াসিম। এ নিয়ে মনোমালিন্য চলছিল। ওয়াসিমকে হত্যার জন্য আলম বাতেনের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে চুক্তি করেন।
সে অনুযায়ী ২০১৫ সালের ৩ এপ্রিল পলক ও মামলার অন্য আসামি সজীব বাঁশপট্টি দালানের সিলভারের মিলের কারখানায় বসে থাকেন। বাতেন ও পাপ্পু ওয়াসিমকে বাবুবাজার ব্রিজের ওপর থেকে ডেকে কারখানায় নিয়ে যান। ওয়াসিম আসার সঙ্গে সঙ্গে পাপ্পু, বাতেন ও সজীব ওয়াসিমকে ধরেন। পলক গেঞ্জি দিয়ে তার মুখ, হাত ও পা বেঁধে ফেলেন। পরে তারা সবাই মিলে ওয়াসিমকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন।
মামলাটি তদন্ত করে ২০১৬ সালে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দেয়া হয়। সজীব শিশু হওয়ায় তার বিরুদ্ধে শিশু আইনে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
গত বছর ২৪ জানুয়ারি চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। আর সজীবের মামলাটি শিশু আদালতে বিচারাধীন।