বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিজ্ঞানী বানাতে চাই: সেঁজুতি সাহা

  •    
  • ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১০:১৬

বিজ্ঞানে আন্তর্জাতিক নারী ও কন্যাশিশু দিবস ১১ ফেব্রুয়ারি। এ উপলক্ষে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছে সেঁজুতি সাহার দল।

২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিজ্ঞান চর্চায় লিঙ্গ সমতাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে জাতিসংঘ। গত কয়েক দশক ধরে বিশ্ব সম্প্রদায় বিজ্ঞান চর্চায় নারী ও কন্যাশিশুদের অনুপ্রাণিত করা ও অংশগ্রহণ বাড়াতে নিয়েছে নানা উদ্যোগ। তবুও পিছিয়ে আছেন নারীরা।

ফলে নারী ও কন্যাশিশুদের বিজ্ঞানে পূর্ণ ও সমান প্রবেশাধিকার অর্জনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১১ ফেব্রুয়ারিকে বিজ্ঞানে আন্তর্জাতিক নারী ও কন্যাশিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

বাংলাদেশে বিজ্ঞানে নারীরা পিছিয়ে থাকলেও, কেউ কেউ আছেন যারা প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা তাদের একজন। বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছে সেঁজুতি সাহার দল।

ক্যানসার সারভাইভার সেঁজুতি এ মারণব্যাধির সঙ্গে লড়াই করে এখনও কাজ করে চলেছেন। জীবাণু বিনাশের পেছনে নিজের সব প্রতিভাকে ঢেলে দিয়েছেন তিনি।

বিশেষ দিনটিতে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন সেঁজুতি। জানালেন, দেশের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বিজ্ঞানী বানাতে চান তিনি।

নিউজবাংলা: স্বাস্থ্য খাতে আপনার অবদানের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষ কীভাবে উপকৃত হচ্ছেন?

সেঁজুতি সাহা: আমি আসলে কাজ করি শিশুদের নিয়ে। আমরা দেখেছি অন্যান্য দেশের চেয়ে আমাদের দেশে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি। আমরা সব সময় ঠিক বুঝি না কোন জীবাণু দিয়ে রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। যদি আমরা না বুঝি কোন জীবাণু দিয়ে এই রোগ হচ্ছে, তাহলে আমরা চিকিৎসকদের কীভাবে সহযোগিতা করব? চিকিৎসকরাইবা কীভাবে এই রোগের চিকিৎসা নিশ্চিত করবেন? আমরা কীভাবে বুঝব এই রোগের টিকা কী হবে?

যেমন, আমরা জানি কোভিড কীভাবে কোন জীবাণুতে ছড়ায়, যে কারণে আমরা এর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারছি। এই রোগের টিকা এসেছে আমাদের হাতে। প্রতিটা রোগের ক্ষেত্রে জীবাণুকে জানতে হয়। তো আমি জীবাণু খুঁজে বের করি।

জীবাণু খুঁজে পাওয়ার পর ছোট ছোট ডায়গনস্টিক টেস্ট করি। খুব সহজে ও চিহ্নিত করে এই তথ্যগুলো নিয়ে আমরা নীতিনির্ধারকদের কাছে যাই এবং তাদের পরামর্শ দিই, যাতে ঠিকমতো চিকিৎসা ও অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারে। আমরা কাজ করি এটা নির্ধারণ করার জন্য যে এর পরের টিকা বাংলাদেশে কী আসছে।

নিউজবাংলা: গবেষণার জন্য এমন বিষয় বেছে নিলেন কেন?

সেঁজুতি সাহা: কাজকে আমি অসম্ভব ভালোবাসি। অবশ্যই অনুপ্রেরণা অনেক কিছুই আছে। শিশুদের রোগগুলোর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে আছে মেনিনজাইটিস। মেনিনজাইটিস ব্রেইনের রোগ। এই রোগে তাৎক্ষণিকভাবে যদি সঠিক চিকিৎসা দেয়া না যায়, তাহলে শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যায়। যদি মারা না যায় তাহলেও অনেক ক্ষেত্রে শিশু সারা জীবনের জন্য প্রতিবন্ধী হয়ে যায়।

আমাদের সমাজের নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি শিশু যখন প্রতিবন্ধী হয়ে যায়, তখন তার পুরো পরিবারটা প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। আমি প্রায় ১১ বছর দেশের বাইরে থাকলেও প্রতি বছর গরমের ছুটিতে বাংলাদেশে বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজ করতাম। বাবা-মায়ের সঙ্গে ল্যাবে কাজ করেছি। বাবা আমাকে বলেছেন, শুধু ল্যাবে কাজ করলে হবে না, মাঠে যেতে হবে। মাঠের মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাই যখন দেশে আসতাম, তখন আমাদের মাঠকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে যেতাম। বস্তিতে বস্তিতে ঘুরে দেখতাম।

মেনিনজাইটিস আক্রান্তদের মায়ের সঙ্গে কথা বলতাম। মেনিনজাইটিসে প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে এমন বাচ্চাদের মায়ের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমরা বোঝার চেষ্টা করেছি যে একটা শিশুর যখন মেনিনজাইটিস হয়, তখন তার পরিবারে কী হয়। আক্রান্তদের চিকিৎসায় অনেক পরিবারকে চাকরি ছেড়ে দেয়াসহ জায়গাজমি বিক্রি করে দিতে হয়।

আমি বাইরে পিএইচডি করে বাংলাদেশে এসেছি মেনিনজাইটিসের জীবাণু নিয়ে কাজ করতে। এই জীবাণু ভালো করে চিহ্নিত করতে কাজ করব। আমার অনুপ্রেরণা হলো আমি এই শিশুদের নিয়ে কাজ করতে চাই। মেনিনজাইটিস আক্রান্ত হয়ে যারা প্রতিবন্ধী হয়েছে, তাদের কষ্ট লাঘবের জন্যও কাজ করতে চাই।

নিউজবাংলা: বাংলাদেশে বিজ্ঞান চর্চায় নারীরা কি পিছিয়ে? যদি তাই হয়, তাহলে বিজ্ঞানে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

সেঁজুতি সাহা: শুধু বাংলাদেশে নয়, অনেক দেশেই নারীরা বিজ্ঞানে পিছিয়ে আছেন। বাংলাদেশেও তা-ই।

নারীদের বিজ্ঞানে জায়গা করে দেয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন তারা পিছিয়ে না থাকেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের নারীদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। আমাদের সমাজের কিছু দায়িত্ব আছে। আমাদের পরিবারের কিছু দায়িত্ব আছে। অবশ্যই আমাদের সেই সেই জায়গা থেকে চেষ্টা করতে হবে।

নারীরা কীভাবে এই জায়গায় কাজ করতে পারেন, সে জন্য উৎসাহিত করতে হবে। বিজ্ঞানে পড়াশোনা করার জন্য বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি অনার্স পড়ুয়া ছেলেদের তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক বেশি। পড়াশুনা শেষ করার পরে নারীদের সেভাবে কর্মক্ষেত্রে দেখা যায় না। বিজ্ঞানে একই রকম এ ক্ষেত্রে। এটা দূর করতে হলে বড় ভূমিকা রাখতে হবে আমাদের পরিবারের। আমরা যে যা-ই করি, পরিবারের সাপোর্টটা সবার আগে প্রয়োজন।

একজন যখন বিজ্ঞান চর্চা করেন বা গবেষণা করেন, গবেষক হওয়ার চেষ্টা করেন, আমাদের লাইফস্টাইলটা কিন্তু খুব আলাদা। অনেক সময় নিয়ে আমরা ল্যাবে কাজ করি। আমাদের ওপর নির্ভর করে রোগীর জীবন। এ ছাড়া আমরা জানি না ল্যাবের কাজ কখন শেষ হবে।

আমাদের জীবন ৯টা-৫টার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের এমন লাইফ বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের সাপোর্টটা খুবই জরুরি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো নারীদের অনেকে সাপোর্ট করছেন। কিন্তু আমাদেরকেও চেষ্টা করতে হবে। আমাদের পরিবারগুলোকে বোঝাতে হবে। আমাদের সমাজে বিজ্ঞান কতটা প্রয়োজনীয় তা বোঝাতে হবে।

যেহেতু অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী, সে ক্ষেত্রে বোঝাতে হবে নারীদের বিজ্ঞানে থাকা কতটা জরুরি। আমাদের ডাক্তাররা ডাক্তারি কী করবে বিজ্ঞান যদি না রোগের জীবাণু বা টিকা নির্ধারণ করে দেয়। ডাক্তার ছাড়া যেমন বিজ্ঞান চলতে পারবে না, তেমনি বিজ্ঞানী ছাড়া চিকিৎসক চলতে পারবেন না।

সমাজে আমরা যদি এগুলো বোঝানোর চেষ্টা করি, শুধু সমাজ নয়, গোটা পরিবার, সমাজকে বোঝানোর চেষ্টা করি, তাহলে বিজ্ঞানে আমরা আরও নারী দেখতে পাব।

নিউজবাংলা: বর্তমানে আপনি কী নিয়ে কাজ করছেন?

সেঁজুতি সাহা: আমি এখনও জীবাণু খুঁজে বেড়াই। মাত্র তো শুরু করেছি। বাংলাদেশে পাঁচ থেকে ছয় বছর কাজ করছি। জীবাণু চিহ্নিত করতে আমরা একটি মডেল তৈরি করছি। কীভাবে জীবাণু খুঁজে বের করতে হয়, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা মূলত জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম।

বাংলাদেশের শিশুদের কী ধরনের জীবাণু আক্রমণ করে, কোথায় কোন জীবাণু সৃষ্টি হচ্ছে, ওই জীবাণুগুলোকে চেনার চেষ্টা করছি। এই তথ্যগুলো আমরা নীতিনির্ধারকের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করছি।

চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন একটি রিসার্চ ইনস্টিটিউট তৈরি করবে। বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে এটি তৈরি করা হবে। এ ছাড়া একটি ট্রেনিং সেন্টার বানাতে চাই। সেখানে শুধু বিজ্ঞানী বানানোর কাজ করা হবে।

আমাদের দেশের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বিজ্ঞানী বানাতে চাই। বিশেষ করে নারীদের ওপর ফোকাস করতে চাই। যে ট্রেনিং সেন্টার তৈরি করা হবে, সেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ছোট মেয়েদের, নারীদের নিয়ে আসবে বিজ্ঞান ট্রেনিংয়ের জন্য।

এ বিভাগের আরো খবর