বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমার অনুপ্রেরণা দেশ: ফেরদৌসী কাদরী

  •    
  • ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০৮:৪৩

বিজ্ঞানে আন্তর্জাতিক নারী ও কন্যাশিশু দিবস ১১ ফেব্রুয়ারি। এ উপলক্ষে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন ম্যাগসেসে পুরস্কারজয়ী বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী। কলেরার টিকা নিয়ে গবেষণা ও সাশ্রয়ী দামে টিকা সহজলভ্য করায় তার অবদান বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত।

২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিজ্ঞান চর্চায় জেন্ডার সমতাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে জাতিসংঘ। কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নারী ও কন্যাশিশুদের বিজ্ঞানে অনুপ্রাণিত করা ও অংশগ্রহণ বাড়াতে নিয়েছে নানা উদ্যোগ, তবুও বিজ্ঞানে পিছিয়ে আছেন নারীরা।

এমন বাস্তবতায় বিজ্ঞানে নারী ও কন্যাশিশুদের পূর্ণ ও সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১১ ফেব্রুয়ারিকে বিজ্ঞানে আন্তর্জাতিক নারী ও কন্যাশিশুদের দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

বাংলাদেশে বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণায় নারীরা পিছিয়ে থাকলেও কেউ কেউ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলছেন। তাদের একজন ফেরদৌসী কাদরী। গত বছর বাংলাদেশের এ বিজ্ঞানী এশিয়ার নোবেল খ্যাত ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছেন।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী। কলেরার টিকা নিয়ে গবেষণা ও সাশ্রয়ী দামে টিকা সহজলভ্য করে লাখো প্রাণ রক্ষায় কাজ করেছেন তিনি।

বিশেষ দিনটিতে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি; জানিয়েছেন বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়নে কাজ করতে চান তিনি।

নিউজবাংলা: স্বাস্থ্য খাতে আপনার অবদানে সাধারণ মানুষ কীভাবে উপকৃত হচ্ছে?

ফেরদৌসী কাদরী: স্বাস্থ্য খাতে আমার অবদান অনেক ছোট। যা করেছি সেটা খুব বেশি কিছু না। আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি আগামীতে বিজ্ঞান দিয়েই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই চিন্তা করেই আজীবন কাজ করে এসেছি।

বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে পারলে আমি গর্ববোধ করি। জীবনের একটি স্বপ্ন বাংলাদেশের উন্নতি। সেটা রোগ প্রতিরোধে টিকা বলেন বা নতুন কোনো ডায়াগনসিস বলেন।

এমন কিছু করতে চাই, যেটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজে লাগে। বিজ্ঞানী তো অনেক আছেন, কিন্তু তারা দেশের জন্য কিছু করছেন কি না, এটা দেখার বিষয়।

নিউজবাংলা: গবেষণার জন্য এমন বিষয় বেছে নেয়ার পেছনে বিশেষ কোনো অনুপ্রেরণা কি আছে?

ফেরদৌসী কাদরী: দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে। নানা রোগ ও সংক্রামক ভাইরাস আছে। একটু সচেতন হলেই এই ভাইরাস আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। রোগ নিয়ন্ত্রণের অনেকগুলো পদ্ধতি আছে। সবার বাসায় সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে যদি স্যানিটাইজার, বিশুদ্ধ পানি ও সুশিক্ষা থাকত, সবাই যদি জানত কীভাবে হাত পরিষ্কার রাখতে হয়, কীভাবে রোগমুক্ত থাকা যায়, বিশেষ করে কলেরা বা ডায়রিয়া, এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

নানা কারণে স্যানিটাইজার, বিশুদ্ধ পানি ও সুশিক্ষা এখনও নিশ্চিত করতে পারিনি। এর একটি কারণও আছে। আমাদের শহরে জনসংখ্যা অনেক বেশি। শহরে বসবাসকারী ৪০ শতাংশ মানুষ বস্তি এলাকায় বাস করেন। এখানে অনেক ঘনবসতি। এখানে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

ময়লা-বাসি খাবার, অপরিষ্কার পানি পান করার কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। বস্তি এলাকায় ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমাদের রাজধানীর স্যুয়ারেজ লাইন উন্নত করতে হবে, যা সহজেই সম্ভব নয়।

এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করাও সমস্যা। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্ব এই সমস্যার মধ্যে রয়েছে, তবে আমার কাছে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে ভালো উপায় হচ্ছে টিকা, যেমনটা করোনা প্রতিরোধে আমরা করছি। টিকা দিয়ে অনেক সহজ উপায়ে একটি রোগ বা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি টিকার জন্য কাজ করেছি।

এই গবেষণার পেছনে অনুপ্রেরণার কথা বলতে হলে আমি বলব আমার অনুপ্রেরণা বাংলাদেশ। অনেক দেশে কলেরার প্রকোপ আছে। কোনো দেশে যদি কলেরা বা ডায়ারিয়া বেশি থাকে, তাহলে সেই দেশে স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এতটা ভালো নেই বলে ধরে নেয়া হয়, তবে আমরা এই রোগকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রেখেছি; অনেকটা কমিয়ে আনতে পেরেছি।

এই রোগের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পেরেছি। আইসিডিডিআরবির হাসপাতালে কলেরা রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়। এই রোগে এখন আর কেউ মারা যায় না, কিন্তু আক্রান্তদের পরিবারের অনেক কষ্ট হয়। একজনের হলে আস্তে আস্তে গোটা পরিবারকে আক্রান্ত করে। দ্রুত ছড়িয়ে যায় গ্রামে গ্রামে। সবকিছু মিলিয়ে এই রোগে ক্ষতি অনেক বেশি হয়। তাই টিকা দিয়ে কমিয়ে আনতে চাই।

এই রোগে যে টিকা উৎপাদন করা হয়েছে, তা ৭০ শতাংশ কার্যকর। টিকা নিলে তার রোগ হবে না এবং তার পরিবারের অন্য লোকেরাও এই রোগ থেকে বেঁচে যাবে।

নিউজবাংলা: বাংলাদেশে বিজ্ঞান চর্চায় নারীরা কি পিছিয়ে? যদি তাই হয়, তাহলে বিজ্ঞানে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

ফেরদৌসী কাদরী: বিজ্ঞানে নারীরা শুধু আমাদের দেশে পিছিয়ে এমনটি নয়, বিশ্বের অনেক দেশে নারীরা বিজ্ঞান চর্চায় পিছিয়ে রয়েছেন, তবে আমাদের দেশে নারী শিক্ষার যে হার, তা অনেক ভালো। মেয়েরা সব ধরনের পড়ালেখা করছে। মেডিক্যাল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সবখানে নারীরা পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, তবে ক্যারিয়ার গড়ার সময় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে; পিছিয়ে পড়ছেন তারা।

এ জন্য মেয়েরা নিজেরাও অনেক সময় দায়ী। আমি নিজের উদাহরণ বলি। আমাদের অনেক শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হয় কর্মক্ষেত্রে। এটা করতে গেলে কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, কষ্ট করতে হয়; কিন্তু শেষে সাফল্য আসে।

বাংলাদেশের মতো দেশে অবশ্যই মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে আসতে হবে। বিজ্ঞানে আবদান রাখতে হবে এবং এটি আজীবন করতে হবে। এ জন্য অনেক পড়াশোনা করতে হবে।

মেয়েদের পেছনে পিতামাতা ও সরকার অনেক টাকা খরচ করছে। এটা নষ্ট করতে দেয়া যাবে না। এ বিষয়ে মেয়েদের সঙ্গে তার পরিবারকেও আসতে হবে।

নিউজবাংলা: বর্তমানে আপনি কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন?

ফেরদৌসী কাদরী: আমার অনেক গবেষণা চলমান। করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে কাজ করছি। একই সঙ্গে করোনার টিকা কীভাবে কাজ করছে, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। আমরা অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করছি। জিনোম সিকোয়েন্স করছি। আমরা একা করছি না। সরকারকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি।

একই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি কাজ করছি। এ জন্য জনবল তৈরি করব বিজ্ঞানের ওপর। সেখানে আমরা এমন কাজ করব, যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যাবে। আমরা যখন উন্নয়নশীল দেশ হব, এটার ওপরে ভর করে যাতে হতে পারি, সেই চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।

আমাদের নিজেদের গবেষণা, নিজেদের চিন্তা, নিজেদের চিকিৎসা এত উচ্চমানের হবে যে, আমরা আর অন্য কারও ওপর নির্ভর করব না; অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকব না।

এ বিভাগের আরো খবর