বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অন্তহীন তদন্তের চক্রে সাগর-রুনি হত্যা

  •    
  • ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০৯

তদন্ত কর্মকর্তার বারবার সময় নিয়েও অভিযোগপত্র দিতে না পারাকে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে অনীহা এবং এই সময়কে বিচারহীনতার এক দশক বলে মনে করছেন নিহত দুই সাংবাদিকের স্বজনরা।

এক দশক আগে হত্যার শিকার হয়েছিলেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। সন্দেহভাজন আট জনকে গ্রেপ্তার, ১৬০ জনের জবানবন্দি গ্রহণ, ডিএনএ টেস্টের জন্য আমেরিকা পাঠানো, ফলাফলের অপেক্ষো- এই অন্তহীন চক্রে কেটে গেছে দশ বছর।

মামলাটির তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি তদন্ত সংস্থা র‌্যাব। সর্বশেষ ৮৫ বারের মতো সময় দিয়েছে আদালত।

তদন্ত কর্মকর্তার বারবার সময় নিয়েও অভিযোগপত্র দিতে না পারাকে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে অনীহা এবং এই এক দশককে বিচারহীনতার এক দশক বলে মনে করছেন নিহত দুই সাংবাদিকের স্বজনরা।

নিহত রুনির ভাই ও মামলার বাদি নওশের আলম রোমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না। বছরের পর বছর তারা একই কথা বলে আসছেন। ডিএনএ টেস্টের রেজাল্ট পেতে কত বছর লাগে? দশ বছরেও আসে না? এটা কি আমাদের দেশের গ্রামগঞ্জের ভূমি অফিস না, আমেরিকা? আমাদের দেশেও তো তার আগে চলে আসে। এসব কথায় বোঝা যায়, বিচার করার কোনো ইচ্ছে তাদের নাই, যে কারণে হচ্ছে না। বিচারহীনতার এক দশক পার করছি আমরা, আমাদের পরিবার।’

সাংবাদিকদের কর্মসূচিতে বৃহস্পতিবার উপস্থিত ছিল সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ ও রুনির ভাই নওশের রোমান। ছবি: সংগৃহীত

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। শেরে বাংলা নগর থানায় দায়ের করা হয় মামলা।

মামলাটি ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে তদন্ত করছে র‌্যাব। বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত ১৬০ জনের জবানবন্দি নিয়েছি। গ্রেপ্তার আট জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ডিএনএ টেস্টের নমুনা আমেরিকায় পাঠানো হয়েছে, যেটার ফলাফল এখনও আসেনি।’

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ জানুয়ারি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সর্বশেষ তারিখ ছিল। কিন্তু সেদিন জমা দিতে না পারায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে আবারও সময়ের আবেদন করা হয়। আদালত ২৩ ফেব্রুয়ারি নতুন তারিখ ঠিক করেন। এ নিয়ে ৮৫ বার পেছাল আলোচিত মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ।

শেরে বাংলা নগর থানায় দায়ের করা মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আসামির সংখ্যা আট। অন্য আসামিরা হলেন বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড এনাম আহমেদ (হুমায়ুন কবির), রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল, তানভীর ও আবু সাঈদ। আসামিদের প্রত্যেককে একাধিবার রিমান্ডে নেয়া হলেও তাদের মধ্যে কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। ছবি:সংগৃহীত

৪৮ ঘণ্টা শেষ হয়নি এক দশকেঘটনার পরই তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন। সন্দেহভাজন হিসেবে আটজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। কিন্তু খুনিরা আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৮ ঘণ্টা সময়সীমা পার হওয়ার পর ১৩ ফেব্রুয়ারি তখনকার আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, এ জোড়া হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ‘প্রণিধানযোগ্য’ অগ্রগতি হয়েছে।

কয়েকদিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি তখনকার ডিসি ডিবি ও ডিএমপির মুখপাত্র এবং বর্তমানে স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। দ্রুততম সময়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হবে।

মনিরুল ইসলামের এ বক্তব্যের দুদিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি খুনিদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে হাইকোর্ট। ঘটনার প্রায় দুমাস পর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে হাজির হয়ে সাগর-রুনি হত্যা তদন্তে তারা ব্যর্থ হয়েছেন বলে স্বীকার করেন মনিরুল ইসলাম।

ওই দিনই উচ্চ আদালত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে র‌্যাবের ডিজিকে নির্দেশ দেন, একজন সুদক্ষ, অভিজ্ঞ এবং এএসপি পদমর্যাদার নিচে নয় এমন একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে এ মামলার তদন্ত করাতে।

হাইকোর্টের নির্দেশনার পর র‌্যাবের আবেদনে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য ২৬ এপ্রিল সাগর-রুনির মরদেহ কবর থেকে তুলে আবার ময়নাতদন্ত করা হয়।

মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান ও মা নুরুন নাহার মির্জা এবং সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনিরসহ দুই পরিবারের অনেক সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ করেই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’

এক দশক ধরে সাংবাদিকরা তাদের দুই সহকর্মীকে হত্যার বিচার দাবি করে আসছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছেন তারা। এ বছরও দুই সাংবাদিকের মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরে তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। মোমবাতি প্রজ্বালন, ডিআরইউ চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেবে সাংবাদিকদের এই সংগঠন।

এ বিভাগের আরো খবর