নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় সাবিত আল হাসান নামের যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবিয়ে দেয়া এসকেএল-৩ লাইটারেজ জাহাজের মাস্টার-সুকানিসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ থেকে ১১ জনকে অব্যাহতি দিয়েছে নৌ পুলিশ। লঞ্চ মালিক নেতারা জানিয়েছেন, প্রভাবশালীর মালিকানাধীন জাহাজ বলেই এত আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
নারায়গঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নূসরাত সাহারা বীথির আদালতে বৃহস্পতিবার অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ইউনুস মুন্সী।
বিচারক অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে পর্যালোচনার জন্য আগামী ২৩ মার্চের সময় দিয়েছেন।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান।
তিনি জানান, অভিযুক্ত তিনজন হলেন জাহাজের মাস্টার মো. ওহিদুজ্জামান, সুকানি আনোয়ার মল্লিক ও ইঞ্জিন ড্রাইভার মজনু মোল্লা। অব্যাহতি দেয়া হয়েছে জাহাজের ১১ কর্মীকে। সব আসামি এখন জামিনে আছেন।
এই লঞ্চডুবির ঘটনা গত বছরের ৪ এপ্রিলের। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান লঞ্চের ৩৪ আরোহী। পরে জানা যায়, লঞ্চকে ধাক্কা দেয়া জাহাজটির মালিক বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইউনুস মুন্সী জানান, তদন্তে জাহাজ চালানোর সময় যাদের অবহেলা ও দুর্ঘটনায় যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপপরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) বাবুল লাল বৈদ্য জানান, বেপরোয়া গতির জাহাজটির ধাক্কায় লঞ্চ ডুবে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি একটি বড় ঘটনা।
তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি মামলা করেছি। শুরুর দিকে তদন্ত কর্মকর্তা আমার কাছে যোগাযোগ করে বিভিন্ন তথ্য নিয়েছেন, কিন্তু পরে তিনি আর কোনো ধরনের যোগাযোগ করেননি। অভিযোগপত্র জমা দেয়ার বিষয়ে কিছুই জানাননি।’
লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌযাত্রী পরিবহন সংস্থার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বদিউজ্জামান বাদল জানান, জাহাজটি বাগেরহাট-২ আসনের সাংসদ শেখ তন্ময়ের প্রতিষ্ঠান এসকে লজিস্টিকসের মালিকানাধীন। মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় মাস্টারসহ কেবল তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ঘটনার সময় মৃত যাত্রীদের পরিবার মামলা করতে চেয়েছিল, কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ তাদের মতো করে মামলা করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। এ কারণে মামলাটির নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। নিহতের পরিবার ও স্বজনরা বিচারের অপেক্ষায় আছেন।’
গত বছরের ৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনাল থেকে সাবিত আল হাসান নামের লঞ্চটি অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে লঞ্চটি শীতলক্ষ্যা নদীর সদর উপজেলার কয়লাঘাট এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে এসকেএল-৩ লাইটারেজ জাহাজ লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয়।
পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিএ, নৌবাহিনীর ডুবুরি দল ও নৌ-পুলিশের সদস্যরা।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে জাহাজ চালিয়ে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা হবে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড; হতে পারে জরিমানাও।