সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
আজ ক্যাম্পাসে পৌঁছে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলবেন।
মন্ত্রীর একান্ত সচিব আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে রওনা হবেন। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন।’
সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মজিবুর রহমানও শিক্ষামন্ত্রীর সফরের বিষয়টি জানান।
তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর সহকারী ফোনে জানিয়েছেন কাল তারা সিলেট আসার প্ল্যান করছেন। তবে এখনও চূড়ান্ত শিডিউল পাইনি।’
অন্যদিকে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ নিউজবাংলাকে জানান, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের মাধ্যমে তারা তথ্যটি জেনেছেন।
মন্ত্রীর এই সফরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণের ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করছেন শিক্ষার্থীরা।
মোহাইমিনুল রাজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী আমাদের ক্যাম্পাসে আসবেন। জাফর ইকবাল স্যারের মাধ্যমে এ তথ্য আমরা জেনেছি। এ ছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মন্ত্রীর আসার কথা জানানো হয়েছে।
‘শুনেছি তিনি দুপুরের দিকে আসবেন। তবে ঠিক কখন আসবেন তা এখনও জানি না।’
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি নিতে বৃহস্পতিবার রাতে ক্যাম্পাসে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারীরা।
মোহাইমিনুল রাজ বলেন, ‘আমরা সংবাদ সম্মেলন করে আলোচনার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে শাবিতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমরাও তার অপেক্ষায় আছি। তিনি এলে উপচার্যের পদত্যাগসহ আমাদের দাবিগুলো পূরণ হবে বলে আশা করছি।’
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে গত ২৬ জানুয়ারি অনশন ভেঙেছিলেন উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সরকারের উচ্চমহল থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়া হবে- এমন আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে সেদিন জানিয়েছিলেন জাফর ইকবাল।
ওই দিন বিকেলেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে তাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
সেই আশ্বাসের ১৬তম দিন পার হয়েছে বৃহস্পতিবার। তবে এখনও পূরণ হয়নি শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি। স্বপদে বহাল আছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। নিজ কার্যালয়ে না গেলেও বাসা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দাবি আদায়ে ক্যাম্পাসে আলোক প্রজ্বালন করেন তারা। বুধবার বিকেলে তারা ‘দাবি আদায়ের মিছিল’ করেন।
শাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় গত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন হলের ছাত্রীরা।
এই দাবিতে আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জানুয়ারি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। ওই দিন সন্ধ্যায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে।
লাঠিচার্জের পর দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। এরপর রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে মুক্ত করে বাসায় নিয়ে আসে পুলিশ।
ওই রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের পরদিন দুপুরের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন উপাচার্য। এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে ওই রাত থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
পরদিন থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে টানা অবস্থান নেন তারা। সেখানে অনশনও শুরু করেন ২৮ শিক্ষার্থী। ২০ জানুয়ারি উপাচার্য ভবনের ফটকে ব্যারিকেড দিয়ে বাইরের কারও প্রবেশ বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা।
গত ২৬ জানুয়ারি সকালে শাবির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের ব্যারিকেড তুলে নেন।
অনশন ভাঙানোর পর অধ্যাপক জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে আসার আগে আমার সঙ্গে সরকারের উচ্চমহল থেকে কথা হয়েছে। তারা আমাকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাদের আশ্বাস পেয়েই আমি এখানে এসেছি।
‘আমি তাদের অনুরোধ করব, তারা আমাকে যে কথা দিয়েছেন সে কথাগুলো যেন রক্ষা করেন। আমি আর এই ছাত্রদের ভেতর কোনো পার্থক্য নেই। আমাকে দেয়া কথা না রাখলে সেটা কেবল আমার সঙ্গে না, এই দেশের সমস্ত প্রগতিশীল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।’
অনশন ভাঙার পর জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হকের হাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচটি দাবি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য তুলে দেন।
দাবিগুলো হলো- উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগসহ ছাত্র উপদেশ পরিচালক অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ ও প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ, ক্যাম্পাসের সবগুলো আবাসিক হল সচল রাখার বিষয়ে উদ্যোগ, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অর্থ সাহায্য দেয়া পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীর জামিন, অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং অনশনরত শিক্ষার্থী ও উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশের হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ভার বহন।
এর মধ্যে গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদকে সরিয়ে নেয়া হয়। যদিও অসুস্থতার কারণে তাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়। রেজিস্ট্রারের সই করা এক আদেশে জহির উদ্দিনের বদলে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক আমিনা পারভীনকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়।
অনশন ভাঙার ১৫ দিন পর বুধবার মোহাইমিনুল বাশার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জাফর ইকবাল স্যার আমাদের বলেছিলেন তাকে (উপাচার্য) সরানোর প্রক্রিয়ার দু-তিন মাস সময় লাগতে পারে। এই দীর্ঘ সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হবে। তাই আমরা দ্রুত সময়ে তার পদত্যাগ চাই।’