মাঘের শেষে বৃষ্টিভেজা সকাল। এমন আবহাওয়ায় মহিষাবান গ্রামের নারীরা উৎসবে মেতেছেন। গ্রামের প্রত্যেক বাড়ির উঠানে বর্ণিল দোকান। আর দোকানে ভিড় জমিয়েছেন কিশোরী থেকে বৃদ্ধা।
এই আড়ম্বর বগুড়ার গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহের বউ মেলা ঘিরে। মাঘের শেষ বুধবার পোড়াদহে মাছের মেলা বসে। একে স্থানীয়রা জামাই মেলা নামেও বলে থাকেন। তার পরের দিন বৃহস্পতিবার গ্রামের ভেতরে বসানো হয় বউ মেলা।আয়োজকরা জানান, ৩০ বছর ধরে শুধু নারীদের জন্য বউ মেলা হচ্ছে গাবতলীর মহিষাবান ইউনিয়নে। বাড়িতে কাজের চাপ থাকায় মাছের মেলায় নারীরা যেতে পারেন না। এ জন্য পরের দিন বউ মেলার আয়োজন করা হয়।
এ মেলার শুধু নারীদের রাজত্ব। এমনকি মেলার অনেক বিক্রেতাও নারী। ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে মেলা ঘুরে তাদের প্রসাধনীসহ প্রয়োজনীয় পণ্য কেনেন নারীরা। এমন কথা জানান মেলায় কেনাকাটা করতে আসা ৪০ বছরের জুলেখা খাতুন। তিনি পোড়াদহ মেলা উপলক্ষে মায়ের বাড়ি বেড়াতে এসেছেন।জুলেখা বলেন, ‘এই বউ মেলা অন্য কোথাও হয় না। শুধু আমাদের মহিষাবান গ্রামেই হয়। মেলায় শুধু নারীরা ঘুরে বেড়ান। কেনাকাটা করেন।’তিনি আরও জানান, প্রতি বছর মহিষাবান গ্রামের সবাই মেলা উপলক্ষে মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত করে। এটিই এখানকার নিয়ম।
সালেহা বেগম নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘এ গ্রামের বউ হয়ে নিজেকে ধন্য মনে হয়। কারণ প্রতি বছর এমন মেলা দেখতে পারি। বউ মেলার দিনে গ্রামের মেয়েরা প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্র কিনে থাকেন।‘পোড়াদহ মেলার আদলেই বউ মেলাটি হয়ে থাকে। নাগরদোলা থেকে শুরু করে মেলার সবকিছুই এখানে থাকে। এ ছাড়া সংসারের খুঁটিনাটি সবকিছুই বিক্রি করা হয়। তবে সেসবই নারীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী।’নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুলতানা রাজিয়া বলেন, ‘মেলায় নাগরদোলায় চড়েছি। চটপটি খেয়েছি। কানের দুলও কিনেছে।’মহিষাবান গ্রামের আরেক শিক্ষার্থী রুকসানা ইসলাম বলেন, ‘নারীদের জন্য একটি মেলা রয়েছে, এটি দেখে ভালো লাগে। এই মেলায় আমরা অনেক আনন্দ করি। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে মেলাটি কেন্দ্র করে গ্রামের সব বাড়িতে উৎসব লেগে যায়।’মেলায় দেখা যায়, গ্রামের ভেতর রাস্তার ধারে বাড়ির উঠানে বসেছে বউ মেলা। মেলার প্রসাধনীসামগ্রী, ইমিটেশনের গয়নাসহ বিভিন্ন খেলনার দোকান বেশি চোখে পড়ে।এ ছাড়া নারীদের জন্য বিভিন্ন কাপড়, জুতা ও ব্যাগের পসরা নিয়ে হাজির হন বিক্রেতারা। আর চটপটি, ফুচকা ও মিষ্টির দোকান তো রয়েছেই।মেলায় আসা নারী বিক্রেতা বিজলী জানান, তারা বিভিন্ন স্থানে মেলায় ব্যবসা করে থাকেন। কিন্তু বগুড়ার এই বউ মেলার জন্য সারা বছর তারা অপেক্ষা করেন। এখানে ব্যবসাও ভালো হয়।আয়োজক কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের মেলায় ২০০টি স্টল (দোকান) বসেছে। প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ টাকার মতো পণ্য কেনাবেচা হয়ে থাকে। এবারও সমপরিমাণ টাকার পণ্য কেনাবেচা হবে এ মেলায়।’