নিলামে ২ কোটি ৯০ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সাতটি গাড়ি। আরও চারটি গাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে জানিয়ে বলা হয়েছে, পরবর্তীতে সেগুলোও নিলামে তোলা হবে।
রাজধানীর ধানমন্ডি ১৪ নম্বর সড়কে ভিক্টোরিয়া কনভেনশন সেন্টারে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। নিলাম প্রক্রিয়া শেষ হয় বেলা আড়াইটার দিকে।
ধানমন্ডির সোবহানবাগে ইভ্যালি কার্যালয়ের পাশে ভিক্টোরিয়া কনভেনশন সেন্টারে উন্মুক্ত নিলামে মোট সাতটি গাড়ি তোলা হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে দামি ছিল রেঞ্জ রোভার।
প্রথম নিলামে তোলা হয় ইভ্যালির সাবেক এমডি রাসেলের ব্যবহৃত বিলাসবহুল রেঞ্জ রোভার (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৮-৭০৯৮)। ২০২০ সালে তৈরি গাড়িটি একই বছরের জুনে রেজিস্ট্রেশন করা। নিলামে এর ন্যূনতম মূল্য বা ভিত্তিমূল্য ধরা হয় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। উন্মুক্ত ডাকে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান ১ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় গাড়িটি কিনে নেন।
তালিকায় থাকা দ্বিতীয় গাড়িটি টয়োটা ব্র্যান্ডের (ঢাকা মেট্রো-গ-৪৫-৪১২৭)। ২০১৫ সালে তৈরি এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে রেজিস্ট্রেশন হওয়া টয়োটা প্রিয়াস মডেলের গাড়িটির ভিত্তি মূল্য ছিল ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নিলামে এটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকায় কিনে নেন রিপন ইসলাম তারা নামের এক ব্যক্তি।
টয়োটা ব্র্যান্ডের আরেকটি গাড়ি টয়োটা বিএইচআর হাইব্রিড (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৮-৭৫১২) ২০১৭ সালে তৈরি এবং ২০২০ সালের জুলাইতে রেজিস্ট্রেশন করা। এটির ভিত্তিমূল্য ছিল ১৮ লাখ টাকা। ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায় এটি কিনে নেন প্রশান্ত ভৌমিক। তিনি ১৫ লাখ টাকায় টয়োটা এক্সিও ব্র্যান্ডের একটি গাড়িও কেনেন।
২০১৫ সালে তৈরি এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে রেজিস্ট্রেশন হওয়া ঢাকা মেট্রো-গ-৪৫-৪৬২১ গাড়িটির ভিত্তি মূল্য ছিল ৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা। একই ধরন ও একই ভিত্তি মূল্যের একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-৪৫-৪৬২০) ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় কিনে নেন আবুল হাসনাত রাসেল। হোন্ডা ব্র্যান্ডের হোন্ডা ভেসেল (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৮-৯৬১৫) গাড়িটি কিনেছেন কানিজ ফাতেমা। ২০১৫ সালে তৈরি এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে রেজিস্ট্রেশন হওয়া গাড়িটি তিনি কিনেছেন ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। এটির ভিত্তি মূল্য ছিল ১৬ লাখ টাকা।
সবশেষে নিলামে ওঠা টয়োটার একটি মাইক্রোবাস বিক্রি হয়েছে ২০ লাখ টাকায়। ২০১৫ সালে তৈরি এবং ২০২০ সালে রেজিস্ট্রেশন হওয়া গাড়িটির ভিত্তিমূল্য ছিল ১২ লাখ টাকা। ঢাকা মেট্রো-চ-৫৬-৪৮২২ গাড়িটি কিনে নেন রিয়াজ উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী।
নিলাম শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নিলামের মাধ্যমে গাড়িগুলো বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে রেঞ্জ রোভার ১ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, টয়োটা প্রিউস ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা, টয়োটা সিএইচআর হাইব্রিড ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, দুটি টয়োটা এক্সিও গাড়ি যথাক্রমে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার ও ১৫ লাখ টাকা, হোন্ডা ভ্যাসেল ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং টয়োটার একটি মাইক্রোবাস ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে।’
ইভ্যালি পরিচালনায় গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি ইভ্যালির আরও চারটি গাড়ির সন্ধান পেয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘সাবেক এমডি রাসেল এই গাড়িগুলো বিভিন্ন লোকজনকে দিয়েছিলেন। গাড়িগুলো যাদের কাছে আছে, তাদের নাম-ঠিকানাও পাওয়া গেছে। অন্যের গাড়ি আটকে রাখা আইনের দৃষ্টিতে চুরি। আগামী রোববারের মধ্যে তারা গাড়িগুলো ফেরত না দিলে অভিযান চালিয়ে সেগুলো উদ্ধার করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হবে। তবে এমন গাড়ির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’
নিলামে ডাক পরিচালনা করেন হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান।
ওই সময় ইভ্যালির এমডি ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।