পুলিশের বরখাস্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের নামে করা ঘুষ নেয়ার মামলায় রায়ের জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছে আদালত।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে বৃহস্পতিবার দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের এ তারিখ ঠিক করা হয়।
অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে দাবি করে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছে দুদক। আর আসামিপক্ষ বলছে, দুদক অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই আসামিরা খালাস পাবেন।
আসামি মিজানুর রহমানের পক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই মামলায় আইনগত অনেক ব্যত্যয় রয়েছে। দুদক মামলাটি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি।
‘সাক্ষীদের জেরার সময় তারা অনেক কিছু এড়িয়ে গিয়ে আমতা আমতা করে জবাব দিয়েছেন। তাই মামলাটি তারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন।’
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘সাক্ষ্য, প্রমাণ ও ঘটনার বিষয়বস্ত আমরা প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। তাই আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করছি।’
শুনানির সময় দুই আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
গত ৩ জানুয়ারি আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন মিজানুর রহমান ও এনামুল বাছির। এরপর তারা ১২ জানুয়ারি আসামিদের লিখিত বক্তব্য জমা দেন।
এর আগে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য নেয়া শেষ হয়। মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ১৭ সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত।
৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলাটি করেন কমিশনের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন ফানাফিল্লাহ।
গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি দুজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট নেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। এরপর তিনি মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-৪-এ বদলির আদেশ দেন।
গত বছরের ১৮ মার্চ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
মামলার প্রেক্ষাপট
২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান। ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলেন মিজান। ডিআইজি মিজানও এ বিষয়ে নিজেই সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে ডিআইজি মিজান দাবি করেন।
এ প্রতিবেদন প্রচার হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ২০১৯ সালের ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন।
পরে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্লা মানি লন্ডারিং আইনে সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন। একই বছরের ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি দল। সেই থেকে তিনি কারাগারে।