সিলেটে শ্বাসরোধ করে নিজের ১ বছর ৫ মাস বয়সী শিশু হত্যার ঘটনায় মা নাজমিন আক্তারকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানায় বুধবার রাতে এই মামলা করেন শিশুটির বাবা সাব্বির হোসেন।
এ তথ্য বৃহস্পতিবার দুপুরে নিশ্চিত করে শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, ‘অভিযুক্ত নাজমিন পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। তাকে এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেবেন।’
নাজমিনের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বাদেপাশা ইউনিয়নের কালিকৃষ্ণপুর গ্রামে। তিনি সিলেটের একটি বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষক।
নিজের শিশুসন্তান সাবিহা আহমদকে বুধবার বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা কথা নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে জানান তিনি।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাজমিন জানান, স্বামীর সঙ্গে বিরোধের জেরে মেয়েকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেছেন। মেয়ের কান্নার শব্দ শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে চিকিৎসকরা সাবিহাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর হাসপাতাল থেকে নাজমিনকে আটক করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। একই সময় নাজমিনের স্বামী সাব্বির হোসেনকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার গোলাপগঞ্জ এলাকার নাজমিনের সঙ্গে সাব্বির হোসেনের বিয়ে হয় ২০১৫ সালে। সাব্বির কাতার প্রবাসী।
নাজমিনের অভিযোগ, স্বামী বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত। তিনি সাবিহাকে নিজের মেয়ে বলে স্বীকার করতে চান না। সম্প্রতি দেশে এসে একদিনও মেয়ে ও স্ত্রীকে দেখতে আসেননি।
তবে সাব্বিরের দাবি, তার স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে থাকতে চান না, আলাদাভাবে থাকতে চান। স্ত্রী আগের স্বামীর ঘরের সন্তানসহ বাবা-বোনের সঙ্গে থাকেন। বুধবার বেলা ১টার দিকে জাফলং যাওয়ার পথে সাব্বির খবর পান- মেয়ে অসুস্থ, হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। এরপর তিনি হাসপাতালে যান। সেখানে স্ত্রী তার কাছে স্বীকার করেন মেয়েকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেছেন।
ইচ্ছা করেই স্ত্রীর সঙ্গে থাকতেন না জানিয়ে সাব্বির বলেন, ‘স্ত্রী যৌথ পরিবারে থাকতে চান না। মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় মঙ্গলবার তাকে চিকিৎসকও দেখানো হয়েছে। চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য বললেও তা মানেননি।’
নাজমিনের বাবা জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘নাজমিন কয়েক দিন ধরে কিছুটা অসুস্থ, শিশুটিও অসুস্থ ছিল। সকালে শিশুটিকে ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। এ সময় শিশুটিকে কোলে রেখেছিলেন নাজমিন।
‘একপর্যায়ে শিশুটি কান্নাকাটির শব্দ শুনে বাসার মালিকসহ কয়েকজন প্রতিবেশী শিশুটিকে মায়ের কোল থেকে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বমি করে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুটি। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’