জাতীয় আইনগত সহায়তা কেন্দ্র (লিগ্যাল এইড) সুপ্রিম কোর্ট শাখার চেয়ারম্যান হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমকে মনোনয়ন করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তাকে মনোয়ন করেন।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার গোলাম রব্বানীর বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আপিল বিভাগে বিচারক হিসেবে নিয়োগ লাভ করায় কমিটির চেয়ারম্যানের শূন্য পদে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছেন।
গরিব, অসহায়, দরিদ্র মানুষকে ফি ছাড়াই আইনি সহায়তা করে আসছে লিগ্যাড এইড (জাতীয় আইনগত সহায়তা কেন্দ্র)। উচ্চ আদালতে আইনগত সহায়তা দেয় সুপ্রিম কোর্ট কোর্ট লিগ্যাল এইড।
বর্তমান সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি। ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ৬ লাখ ৭ হাজার ৮৮০ জনকে সরকারি খরচে আইনি সেবা দেয়া হয়।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ৬৪টি জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৯৬৮ জনকে সরকারি খরচে মামলা করা ও আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে আইনি সহায়তা করেছে।
এ ছাড়া ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত কারাগারে আটক থাকা ৮৫ হাজার ৭৫১ জন অসহায় কারাবন্দিকে সরকারি আইনগত সহায়তা দিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে।
লিগ্যাল এইডে মামলা নিষ্পত্তি: ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পারিবারিক, দেওয়ানি, ফৌজদারিসহ মোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬৫৪ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে। নিষ্পত্তিকৃত মামলাগুলোর মধ্যে দেওয়ানি ১৮ হাজার ৬৭২টি, ফৌজদারি ৮৯ হাজার ৩৯৯টি, পারিবারিক ২৮ হাজার ৬৮৭টি এবং অন্যান্য ৮৯৬টি। এ ছাড়া ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে ২ হাজার ৪৬টি মামলায় সরকারি খরচে আইনি সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং ১৯ হাজার ৭৩৭ জনকে আইনি পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
শ্রমিকদের জন্য আইনি সহায়তা সেল: দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রমিকদের আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংস্থা ২০১৩ সালে ঢাকার শ্রম আদালতে ও ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের শ্রম আদালতে শ্রমিক আইন সহায়তা সেল স্থাপন হয়। এ দুই সেলের মাধ্যমে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৯৫৫ জনকে আইনি পরামর্শ দেয়া, ৩ হাজার ৩৭০টি মামলা করা, ৩০০টি মামলা নিষ্পত্তি, ২৫৮ জনকে চাকরিতে পুনর্বহাল এবং ৭১টি সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বাতিল করা হয়। এ ছাড়া ১ হাজার ১৭৭টি বিরোধ বিকল্প পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪ কোটি ৭৮ লাখ ৯৯ হাজার ২৩৭ টাকা আদায় করা হয়েছে।
কারাবন্দিদের আইনি সহায়তা: জাতীয় আইনি সহায়তা প্রদান সংস্থা ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত কারাগারে আটক থাকা ৮৫ হাজার ৭৫১ জন অসহায় কারাবন্দিকে সরকারি আইনগত সহায়তা দিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে।
করোনাকালে আইনি সেবা কার্যক্রম: করোনাভাইরাসের এ সময়েও আইন মন্ত্রণালয়ের জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা সাধারণ মানুষের জন্য আইনি পরামর্শ কার্যক্রম জোরদার করেছে। গত বছর জাতীয় হেল্পলাইন ১৬৪৩০ টোল ফ্রি নম্বরটি ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ২৪ ঘণ্টার জন্য চালু করা হয়েছে। ফলে যেকোনো সময়ে অসহায় শ্রমিকরা ফোন করে তাদের আইনগত সমস্যা জানাচ্ছে এবং শ্রম আইন অনুসারে তাদের আইনগত অধিকার কী সে বিষয়ে জানতে পারছে।
পারিবারিক সহিংসতা বা যেকোনো আইনি বিষয়ে সাধারণ মানুষ ১৬৪৩০ হেল্পলাইন নম্বরের শরণাপন্ন হচ্ছে। সারা দেশের লিগ্যাল এইড অফিসারদের এ সেবার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয় জানায়, জরুরি আইনি সেবা দিতে প্রয়োজন অনুযায়ী লিগ্যাল এইড অফিসারদের কাছে কল ট্রান্সফার করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আফ্রিকা মহাদেশের উগান্ডা এরই মধ্যে রোল মডেল হিসেবে নিয়েছে লিগ্যাল এইডকে।