বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফ্রি সেবায় নেই, চিকিৎসক মেলে সিজার ব্যবসায়

  •    
  • ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০৮:৩১

জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জুনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হায়াত হোসেন জানান, জানুয়ারি মাসে মাগুরায় ২৭টি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ১৫৬টি। আর সিজার হয়েছে ৬৫৭টি। এর মধ্যে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকসহ এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে।  

মাগুরা জেলায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রায় বিনা মূল্যে প্রসূতিসেবা থাকলেও সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের খুঁজে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিপরীতে এসব বিশেষজ্ঞেরই চিকিৎসাসেবা মিলছে অনেক টাকার বিনিময়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে।

সদর হাসপাতালের পাশাপাশি মাগুরার প্রসূতিসেবার ভরসার জায়গা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। কিন্তু সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই গত তিন মাস।

এদিকে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে চাইলেই পাওয়া যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে এসব হাসপাতালের মাসিক আয় কোটি টাকার ওপরে।

এমন ভারসাম্যহীন অবস্থায় জেলার দরিদ্র মানুষজন সরকারি বিনা মূল্যের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

১০ শয্যাবিশিষ্ট মাগুরার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি শহরের পুরাতন বাজার এলাকায় অবস্থিত। গত দুই বছর ধরে সেখানে আধুনিক অপারেশন থিয়েটার থেকে শুরু করে প্রসূতি মায়েদের বিনা মূল্যে আল্ট্রাসনোগ্রামসহ অন্যান্য পরীক্ষা করানোর আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। তখন এই হাসপাতালটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন ডা. নন্দদুলাল বিশ্বাস। তিনি বদলি হওয়ার পর গত নভেম্বর থেকেই এই হাসপাতালটিতে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। তাই অপারেশন থিয়েটার বন্ধ।

কেন্দ্রটিতে বর্তমানে একমাত্র চিকিৎসক হিসেবে আছেন (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সুমা সাহা। তিনি জানান, হাসপাতালটিতে এখন নরমাল ডেলিভারি ও সাধারণ চিকিৎসাসেবা চলছে। তবে পুরো কেন্দ্রটি তার একার পক্ষে সামলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

এ ছাড়া সেখানে যেসব প্রসূতি সিজার করাতে আসছেন তাদের মাগুরা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সদর হাসপাতালে সপ্তাহে মাত্র দুই দিন সিজার করানোর সুবিধা থাকায় বাধ্য হয়ে রোগীরা বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে যাচ্ছেন। এতে রোগীদের গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।

জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জুনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হায়াত হোসেন জানান, জানুয়ারি মাসে মাগুরায় ২৭টি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ১৫৬টি। আর সিজার হয়েছে ৬৫৭টি। এর মধ্যে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকসহ এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে।

বিপরীতে, সরকারি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে গত নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে অন্তত ১০০টি। সিজার হয়নি একটিও।

মাগুরার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে জানা যায়, সিজার করাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীরাই অনুরোধ করেন। প্রসববেদনা শুরু হলে খুব অল্প মায়েরই নরমাল ডেলিভারি হয়।

বেশির ভাগ রোগী চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্লিনিকেই ভর্তি হন। পরে সিজার করা ও সন্তান নিয়ে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত তাদের গুনতে হয় ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

বেসরাকারি হাসপাতালগুলোতে আবার দুই রকমের সিজার হয়। এক ধরনের সিজারে খরচ অপেক্ষাকৃত কম, অন্য ধরনটিতে বেশি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরোনো এক ক্লিনিকের ম্যানেজার জানান, যেসব নিবন্ধিত চিকিৎসক কোনো একটি ডিপ্লোমা করে সার্জারি করা শিখেছেন তারা সিজার করাতে তুলনামূলক কম টাকা নেন। আর যদি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে সিজার করাতে হয়, তাহলে ৮ থেকে ১৪ হাজার টাকা গুনতে হয় রোগীদের। অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এ ক্ষেত্রে একেকজন রোগীকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়।

এই হিসাবে শুধু জানুয়ারি মাসেই ৬৫৭টি সিজারে কোটি টাকার ওপরে ব্যবসা করেছে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো।

এক প্রসূতির স্বামী সুলতান গাজী অভিযোগ করেন, বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর ভিড় বাড়াতেই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া যায় না।

সুলতান জানান, তার বাড়ি সদরের কাটাখাল এলাকায়। স্ত্রীকে নিয়ে প্রথমে মা ও শিশু কেন্দ্রে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে সিজার বন্ধ, তাই সদর হাসপাতালে যান মঙ্গলবার রাত ৮টায়। কিন্তু সেদিন সরকারি হাসপাতালে সিজার সম্ভব নয় জেনে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বাধ্য হন।

প্রসূতিদের নরমাল ডেলিভারিতে চিকিৎসক পাওয়া না গেলেও সিজার করতে তাদের পাওয়া যায় দ্রুত। ছবি: নিউজবাংলা

ওই ক্লিনিকে সরকারি হাসপাতালেরই এক চিকিৎসক রাত ১১টায় সুলতানের স্ত্রীর সিজার করান।

সুলতান বলেন, ‘আমি দিনমজুর। দেয়ালে রং করে যে সামান্য আয়, তা দিয়ে সংসার চালাই। তাই স্ত্রী ও সন্তানের জন্য এখন ১৫ হাজার টাকা ধার করতে হয়েছে। ফ্রি সেবা তাহলে কই পেলাম।’

৭ দিন পর গত ৭ জানুয়ারি সদর হাসপাতালের পেছনে থাকা নিউ আল-বারাকা নামের একটি ক্লিনিকে রাশিদা বেগম নামের এক প্রসূতি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

রাশিদা মাগুরা সদর উপজেলার খর্দ গ্রামের রমজান শেখের স্ত্রী। তার শ্বশুর মাখন বিশ্বাস অভিযোগ করেন, অস্ত্রোপচারের আগে রক্তের প্রয়োজন হলে রাশিদার শরীরে ‘ও’ পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে ক্লিনিকের প্যাথলজি থেকে ‘এবি’ পজিটিভ রক্ত দেয়া হয়। এতে জন্মের পরপরই অসুস্থ হয়ে মারা যায় নবজাতক।

অন্যদিকে ভুল রক্তের কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মা রাশিদাও। উপায়ান্তর না দেখে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রাশিদাকে দ্রুত ঢাকার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাশিদার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় সাভার থানায় একটি হত্যা মামলা করেছে রাশিদার পরিবার। এ বিষয়ে মাগুরা জেলা সিভিল সার্জন থেকে একটি চার সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. শহিদুল্লাহ দেওয়ান নিউজবাংলাকে বলেন, চিকিৎসার মান উন্নয়নে অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ম মেনে ব্যবসা করতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটিকে বন্ধ করা হয়েছে। সামনে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

অন্যদিকে মাগুরা জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রসূতিদের ভোগান্তির সমাধান হতে পারে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি। কেন্দ্রটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খুবই দরকার। এ সেক্টরে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। তবু চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান উন্নয়নে এর মধ্যেই সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে বলেও জানান ফারুক আহমেদ।

এ বিভাগের আরো খবর