বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে নাটকীয়তা চলছেই। সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদের ওপর বুধবার স্থিতাবস্থা জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। ফলে আপাতত আর কেউ ওই পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার সন্ধ্যায় এফডিসিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ। জানান, তার চেয়ারে বসতে বাধা নেই। যেহেতু ১৩ ফেব্রুয়ারি শুনানি রয়েছে, তাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে এখনই চেয়ারে বসছেন না।
সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে এমন কী আছে, যার জন্য এত কিছু করছেন জায়েদ খান ও নিপুণ? এমন প্রশ্নের উত্তরে নিপুণ বলেন, ‘আমি তো এক দিন বসেছিলাম। আমি দেখেছি যে, এটা একটা রেগুলার চেয়ার। যে চেয়ারটা আমরাই কিনে নিয়ে এসেছি। চেয়ারের মধ্যে এমন কিছুই নেই।’
তিনি বলেন, ‘নিপুণ সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী, এ কথা এখন আপনারা বলতে পারেন। ১৩ তারিখে যেটা হবে সেটা হলো, যে রিটটি করা হয়েছে সেটা ফুল বেঞ্চ শুনবে। অর্থাৎ পাঁচজন বিচারপতি সেখানে উপস্থিত থেকে রিটের সব কথা শুনবেন এবং পরবর্তী আদেশ দেবেন।’
নিপুণ তার পদের ভোট রি-কাউন্টিং (পুনরায় গণন) এবং আচরণবিধি নিয়ে দুটি অভিযোগ করেছিলেন শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আপিল বোর্ডের কাছে।
জায়েদের দাবি ছিল, আপিল বোর্ড বিলুপ্ত হওয়ার পর নিপুণ বোর্ডের কাছে অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে নিপুণ বলেন, ‘আজকে (বুধবার) যদি সাংবাদিকরা আদালতে উপস্থিত থাকতে পারতেন তাহলে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যেত। শুনানি অনলাইনে হওয়ায় আপনাদের কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হচ্ছে না। ৪০ মিনিটের মতো কথা হয়েছে এবং সব বিষয় উঠে এসেছে আলোচনায়।’
এই চিত্রনায়িকা বলেন, ‘এখন সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে কোনো বাধা নেই, কিন্তু নিপুণ ফুল বেঞ্চের শুনানির জন্য অপেক্ষা করতে চান। আদালত যে রায় দেবেন, তিনি সেটাই মেনে নেবেন।’
এফডিসিতে ৬ ফেব্রুয়ারি কাঞ্চন-নিপুণসহ তাদের প্যানেল থেকে জয়ীদের শপথ পড়ান বিদায়ি সভাপতি মিশা সওদাগর। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না মিশা-জায়েদের প্যানেল থেকে জয়ী কেউ। এতে দুই প্যানেলের বিভেদ স্পষ্টই ফুটে উঠেছে।
এই পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করবেন, জানতে চাইলে নিপুণ বলেন, ‘এখানে কোনো বিভেদ নেই।’
এসব কথা বলার সময় নিপুণের সঙ্গে ছিলেন সহসাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী সাইমন সাদিক। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যে ২১ জন জয়ী হয়েছি, তারা এখন আর আলাদা কেউ না। আমরা সবাই এক। তারা আসেননি, তবে আমরা বিশ্বাস করি, তারা আসবেন।’
সাইমন আরও বলেন, ‘আদালত জানতে চেয়েছিলেন, শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়েছে কি না? সেখানে ছবিসহ প্রমাণ দেখানো হয়েছে এবং শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন বিদায়ি সভাপতি। এ কথা শুনে বিচারক বলেছেন, তাহলে তো ঠিকই আছে।’
সাইমন আশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘১৩ তারিখে দেখানো হবে নিপুণ আপাই সাধারণ সম্পাদক।’
চেয়ারে বসতে পারলে পূর্ণ সদস্য থেকে সহযোগী সদস্য হওয়াদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে কাজ করবেন বলে জানান নিপুণ।
তিনি বলেন, ‘শিল্পী সমাজের জন্য সবাই দোয়া করবেন। অবশ্যই আমাদের ভুল বুঝবেন না। আমরা শিল্পী বলে আপনারা টিভির সামনে এত কিছু দেখতে পাচ্ছেন। এর থেকেও হয়তো বড় কিছু অন্য জায়গায় হচ্ছে, দেখতে পাচ্ছেন না।’
চিত্রনায়ক জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে আপিল বোর্ডের দেয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে গত ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল করেন চিত্রনায়িকা নাসরিন আক্তার নিপুণ।
এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে আদেশ দেয় বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
একই সঙ্গে বোর্ডের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করে আদালত।
পাশাপাশি আদালত আপিল বোর্ডের দুই সদস্য ও নিপুণকে নির্দেশ দিয়েছে, তারা যেন জায়েদ খানকে দায়িত্ব পালনে কোনো রকম বিরক্ত না করেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন নিপুণ।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে আপিল বোর্ড। এ পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করা হয় অভিনেত্রী নাসরিন আক্তার নিপুণকে।
এফডিসিতে ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে শিল্পী সমিতি নির্বাচনের আপিল বোর্ডের প্রধান সোহানুর রহমান সোহান এ ঘোষণা দেন।
বোর্ডের এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন জায়েদ খান।
গত ২৮ জানুয়ারি এফডিসিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন হয়।