উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীরা।উপাচার্যবিরোধী চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে বুধবার বিকেলে নিজেদের দাবি সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে এ মিছিল করেন তারা।বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে উপাচার্যের বাসভবন, আইআইসিটি ভবন, প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন হয়ে পুনরায় গোলচত্বরে এসে শেষ হয়। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।মিছিলে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল তাদের দাবি আন্দোলনের ছবি ও ব্যাঙ্গচিত্র সংবলিত প্ল্যাকার্ড। ‘ফরিদ হটাও, শাবি বাঁচাও,’ ‘আমাদের আন্দোলন চলছে চলবে’, ‘অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার কর, করতে হবে’, ‘ফরিদের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’- এমন লেখা ছিল প্ল্যাকার্ডে। মিছিলে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানান।আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে, থাকবে। ভিসি ফরিদ উদ্দিনকে না হটানো পর্যন্ত এ আন্দোলনের শেষ হবে না।’তিনি বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনশন ভাঙানোর অর্ধমাস পেরিয়ে যাচ্ছে। এখনও আমাদের সব দাবি মেনে নেয়ার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’শাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় গত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদে লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন হলের ছাত্রীরা।এই দাবিতে আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জানুয়ারি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। ওই দিন সন্ধ্যায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে।
লাঠিচার্জের পর দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। এরপর রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে মুক্ত করে বাসায় নিয়ে আসে পুলিশ।
ওই রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের পরদিন দুপুরের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন উপাচার্য। এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে ওই রাত থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
পরদিন থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে টানা অবস্থান নেন তারা। সেখানে অনশনও শুরু করেন ২৮ শিক্ষার্থী। ২০ জানুয়ারি উপাচার্য ভবনের ফটকে ব্যারিকেড দিয়ে বাইরের কারও প্রবেশ বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা।
গত ২৬ জানুয়ারি সকালে শাবির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের ব্যারিকেড তুলে নেন।
অনশন ভাঙানোর পর অধ্যাপক জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে আসার আগে আমার সঙ্গে সরকারের উচ্চমহল থেকে কথা হয়েছে। তারা আমাকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাদের আশ্বাস পেয়েই আমি এখানে এসেছি।‘আমি তাদের অনুরোধ করব, তারা আমাকে যে কথা দিয়েছেন সে কথাগুলো যেন রক্ষা করেন। আমি আর এই ছাত্রদের ভেতর কোনো পার্থক্য নেই। আমাকে দেয়া কথা না রাখলে সেটা কেবল আমার সঙ্গে না, এই দেশের সমস্ত প্রগতিশীল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।’
অনশন ভাঙার পর জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হকের হাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচটি দাবি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য তুলে দেন।
দাবিগুলো হলো- উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগসহ ছাত্র উপদেশ পরিচালক অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ ও প্রক্টোরিয়াল বডির অপসারণ, ক্যাম্পাসের সবগুলো আবাসিক হল সচল রাখার বিষয়ে উদ্যোগ, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অর্থ সাহায্য দেয়া পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীর জামিন, অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং অনশনরত শিক্ষার্থী ও উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশের হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ভার বহন।
এর মধ্যে গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদকে সরিয়ে নেয়া হয়। যদিও অসুস্থতার কারণে তাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়। শাবি রেজিস্ট্রারের সই করা এক আদেশে জহির উদ্দিনের বদলে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক আমিনা পারভীনকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়।