বিশ্ব বিখ্যাত বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের জেডফোর স্পোর্ট অটো মডেলের বাজারমূল্য ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। কাস্টমসের নিলামে কোটি টাকার সেই গাড়ি বিক্রি হলো ৫৯ লাখ টাকায়। নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে গাড়িটি পায় সাইফ অটোমোবাইলস। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মো. সাইফুদ্দিন। কেবল শখের বসেই গাড়িটি কিনেছেন তিনি।
তার মতো হাজি মো. সেলিম নিজের শখ পূরণে নিলামে অংশ নিয়ে ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বিএমডব্লিউ ৭৩০এলডি এসই মডেলের গাড়িটি কিনেছেন ৬২ লাখ টাকায়। ফারজানা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজের শখের পাশাপাশি তার বিদেশি ক্রেতাদের জন্যও গাড়টি ব্যবহার করবেন।
১ কোটি ২৯ লাখ টাকা মূল্যের ২০০৪ মডেলের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িটি নিলামে বিক্রি হয় মাত্র ৪৮ লাখ টাকায়। আর সেটি কিনেছেন খুলনার সুপার জুট মিলস লিমিটেডের কর্ণধার এম ফিরোজ আহমেদ।
২০১১ সালে কারনেট ডি প্যাসেজে (পর্যটন সুবিধায়) আনা ১১০টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে নিলামে বিক্রীত এই তিনটি গাড়ি বুধবার বিকেলে চূড়ান্তভাবে ক্রেতাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পক্ষে কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম প্রতীকী চাবির মাধ্যমে তাদের কাছে হস্তান্তর করেন।
এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন বন্দরে পড়ে থাকা ১১০টি গাড়ির জট কমা শুরু হলো। সরকারের বিপুল টাকা রাজস্বও আদায় হবে এ বিক্রির ফলে।
কাস্টমসের নিলাম শেডে গাড়িগুলো আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের আগে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘নানা জটিলতা দূর করে এনবিআরের সহযোগিতা অবশেষে ১১০টি গাড়ি থেকে নিলামে বিক্রীত তিনটি গাড়ি হস্তান্তর করতে পারলাম৷ এ হস্তান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বন্দর ও কাস্টমসে গাড়ির জট কমা শুরু হলো।
‘বাকি গাড়িগুলোর মধ্যে ৮৬টি গাড়ির ক্লিয়ারেন্স পারমিট (সিপি) দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ফলে কোনো ধরনের ইনভেন্টোরি ছাড়াই অতিদ্রুত আমরা সেগুলো নিলামে বিক্রি করতে পারব। অন্য গাড়িগুলোর জন্য সিপির প্রয়োজন নেই।’
কাস্টমসের নিলাম শাখা থেকে জানা গেছে, এই তিনটি গাড়ি এর আগে চারবারে নিলামে তোলা হলেও বিক্রি হয়নি। সবশেষ গত ৩ ও ৪ নভেম্বর ১১০টি গাড়ি ফের নিলামে তোলা হলে সেখানে বিক্রি হয় এই তিনটি গাড়ি।
বিএমডব্লিউ স্পোর্টস কার নিলামে কিনতে পেরে খুশি সাইফ অটোমোবাইলসের কর্ণধার মো. সাইফুদ্দিন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০২২ সালের এ গাড়ি কিনতে গেলে খরচ হতো ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। কালো রঙের ২০০৬ মডেলের এ গাড়িটি লাখ টাকায় কিনতে পেরে আমি খুশি। কেবল নিজের শখ পূরণে কিনেছি এ গাড়ি। এ গাড়ি ছাড়াও গত নিলামে ১১টি গাড়ির সর্বোচ্চ দরদাতা ছিলাম আমি।’
নিলামে কেনা বিএমডব্লিউ ২০০৭ মডেলের আরেকটি গাড়ি নিতে আসা ফারজানা গ্রুপের হাজি মো. সেলিম বলেন, ‘ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যই নিলামে অংশ নিয়ে গাড়িটি নিয়েছি। চট্টগ্রামে এসব গাড়ি নেই। এতে বিদেশি অতিথিরা এলে বিপাকে পড়তে হয়। গাড়িটির আরও প্রায় ১৫-২০ লাখ টাকার কাজ করতে হবে।’
চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে থাকা বাকি গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বিলাসবহুল হলো যুক্তরাজ্যের ল্যান্ড রোভার গাড়ি। এ রকম সাতটি গাড়ি আছে। মূল্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় শুল্ককরসহ ৫ কোটি টাকারও বেশি দামের গাড়ি আছে এখানে। এ ছাড়া অন্যান্য ব্র্যান্ডের মধ্যে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাপান ও কোরিয়ায় ১৯৯৫ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, ল্যান্ড ক্রুজার, ফোর্ড, লেক্সাস, জাগুয়ার, রেঞ্জ রোভার, সিআরভি, পাজেরো রয়েছে এখন পরবর্তী নিলামে বিক্রির অপেক্ষায়।