সিরাজগঞ্জের তাড়াশে এক গ্রামে গর্ত খুঁড়ে তাতে ১৭ বছর ধরে বসবাস করছেন এক দম্পতি- এমন খবর ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। বিষয়টি নিয়ে কিছু সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে।
সেই বাড়ির খোঁজে নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক তাড়াশের বারুহাস ইউনিয়নের দিঘরিয়া গ্রামে গিয়েছেন বুধবার। কথাও হয়েছে রুহুল আমিন ও রেহেনা খাতুন দম্পতির সঙ্গে।
তবে সেখানে গিয়ে কোনো গর্ত পাওয়া যায়নি। যে ঘরে ওই দম্পতি থাকেন, সেটি রুহুলের পৈতৃক জমির ওপর তোলা। আশপাশে তারই চাচাতো ভাইদের বাড়ি।
তবে ওই বাড়িগুলোর চেয়ে তার ঘরটি তিন থেকে চার হাত নিচু। ঘরের দেয়াল টিন ও বেড়ার; ছাদ বলতে আছে ত্রিপল। এই দম্পতি জানান, উপার্জন যথেষ্ট নয় বলে ভালোমতো ঘর তুলতে পারেননি তারা। জমি উঁচু করার জন্য মাটিও আনতে পারেননি। এ কারণেই অন্যদের চেয়ে নিচু হয়ে গেছে তাদের ঘর।
রুহুল জানালেন, জায়গাটি মোটেও গর্ত নয়, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া তার নিজস্ব জমি।
যে কারণে জমিটি নিচু
প্রায় ২৫ বছর হতে চলল রুহুল-রেহেনার বিয়ের। সংসারজীবনের শুরু থেকে এই জমিতেই একটি মাটির ঘরে থাকতেন তারা। বছর তিনেক আগে তা ভেঙে গেছে বলে জানান এই দম্পতি।
রুহুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ ২৫ বছরের সংসারে প্রথম দুই বছর দিঘরিয়া দিয়ারপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই থেকেছি। পরে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া এই তিন শতক জমিতে মাটির ঘর তুলে থাকতে শুরু করি।
‘বছর তিনেক আগে সেই ঘরটিও ভেঙে যায়। পরে দুই বছর চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে একটি ছাপড়া ঘরে থাকি। এরপর জমির পাশে রাস্তার কাজ যখন হয়, তখন মাটি ফেলার সময় আমার জায়গা থেকেও মাটি কেটে নেয়।’
রুহুল জানান, রাস্তার কাজের জন্য সেখানকার সব জমি থেকেই মাটি কেটে নেয়া হয়। পরে তার চাচাতো ভাইরা নিজ নিজ অংশে মাটি নিয়ে এসে তা ফেলে জমি উচুঁ করে নেয়। তবে টাকা না থাকায় তিনি মাটি ফেলতে পারেননি। এ কারণে তার জমি থেকে যায় নিচুতেই।
এর পর থেকে সেখানেই ত্রিপল টানিয়ে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকছেন। তবে এটি গুহা বা গর্ত বলছেন না তিনি।
তার স্ত্রী রেহানা বলেন, ‘এটা মাটির গর্ত না। তবে নিচু জায়গার মধ্যে থাকতে অনেক সমস্যা হয়। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় ঘরের ভেতর ও চারপাশ স্যাঁতসেঁতে থাকে। তা ছাড়া শীতে ভীষণ কষ্ট হয়।
‘দিনমজুর স্বামীর উপার্জনেই আমাদের এই কষ্টের সংসার চলে। অভাবের তাড়নায় মেজো মেয়ে মীমকে মাত্র এক সপ্তাহ বয়সে দত্তক দিয়েছি। বড় মেয়ে বিলকিছ খাতুনকে সতীনের সংসারে বিয়ে দিয়েছি। জামাই ও মেয়েকে বাড়ি আনতে পারছি না ভালো ঘর না থাকায়।’এই দম্পতি জানান, তাদের ছোট মেয়ে মিতু বারুহাস উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। মেধাবী হলেও অর্থের অভাবে মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় আছে।
রুহুল জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ার আশায় তিনি আবেদন করেছিলেন। তবে তা পাননি।
তাড়াশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নূর মামুন বলেন, ‘আমরা সরেজমিন গিয়ে দেখে এসেছি তাদের কোনো ঘর নেই। তারা ত্রিপল টানিয়ে বসবাস করেন। সরকারে একটি প্রকল্প আছে জমি আছে ঘর নেই। আমরা দ্রুত চেষ্টা করছি এই প্রকল্পের আওতায় এনে তাদের একটি ঘর দিতে।’
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেজবাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সরেজমিন গিয়ে দেখে এসেছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘তবে তারা গুহায় বসবাস করে এ কথা পুরোটাই মিথ্যা। আমরা চেষ্টা করছি তাদের একটি ঘরের ব্যবস্থা করার জন্য।’