বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শাবি ভিসি পরিবর্তনের আশ্বাস পূরণ কবে?

  •    
  • ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৭:২৮

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়গুলো এখন আমাদের হাতে নেই। এগুলো সরকারের হাতে চলে গেছে। সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মিলেই একটি সিদ্ধান্ত আসবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কবে আসবে, তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’

লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে গত ২৬ জানুয়ারি অনশন ভেঙেছিলেন উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সরকারের উচ্চমহল থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়া হবে- এমন আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে সেদিন জানিয়েছিলেন জাফর ইকবাল।

ওই দিন বিকেলেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে তাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

সেই আশ্বাসের ১৫ দিন পেরোতে চলছে বুধবার। তবে এখনও পূরণ হয়নি শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি। স্বপদে বহাল আছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। নিজ কার্যালয়ে না গেলেও বাসা থেকেই বিশ্ববিদালয়ের দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

আশ্বাস পেয়ে অনশন ভাঙলেও দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। বাড়ছে হতাশাও। উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

দাবি আদায়ে মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে আলোক প্রজ্বালন করেন তারা। বুধবার বিকেলে তারা ‘দাবি আদায়ের মিছিল’ করবেন বলে জানা গেছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, উপাচার্যের পদত্যাগ বা অপসারণে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে বলে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাদের জানিয়েছেন।

এই দীর্ঘ সময় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে তাদের শিক্ষাজীবন সংকটে পড়বে। এ অবস্থায় দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পাশাপাশি আশ্বাস পূরণ করার দাবি জানানো হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, উপাচার্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে সরকার।

শাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় গত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদে লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন হলের ছাত্রীরা।

এই দাবিতে আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জানুয়ারি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। ওই দিন সন্ধ্যায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে।

লাঠিচার্জের পর দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। এরপর রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে মুক্ত করে বাসায় নিয়ে আসে পুলিশ।

ওই রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের পরদিন দুপুরের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন উপাচার্য। এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে ওই রাত থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।

পরদিন থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে টানা অবস্থান নেন তারা। সেখানে অনশনও শুরু করেন ২৮ শিক্ষার্থী। ২০ জানুয়ারি উপাচার্য ভবনের ফটকে ব্যারিকেড দিয়ে বাইরের কারও প্রবেশ বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা।

গত ২৬ জানুয়ারি সকালে শাবির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের ব্যারিকেড তুলে নেন।

অনশন ভাঙানোর পর অধ্যাপক জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে আসার আগে আমার সঙ্গে সরকারের উচ্চমহল থেকে কথা হয়েছে। তারা আমাকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাদের আশ্বাস পেয়েই আমি এখানে এসেছি।

‘আমি তাদের অনুরোধ করব, তারা আমাকে যে কথা দিয়েছেন সে কথাগুলো যেন রক্ষা করেন। আমি আর এই ছাত্রদের ভেতর কোনো পার্থক্য নেই। আমাকে দেয়া কথা না রাখলে সেটা কেবল আমার সঙ্গে না, এই দেশের সমস্ত প্রগতিশীল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।’

অনশন ভাঙার পর জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হকের হাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচটি দাবি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য তুলে দেন।

দাবিগুলো হলো- উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগসহ ছাত্র উপদেশ পরিচালক অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ ও প্রক্টোরিয়াল বডির অপসারণ, ক্যাম্পাসের সবগুলো আবাসিক হল সচল রাখার বিষয়ে উদ্যোগ, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অর্থ সাহায্য দেয়া পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীর জামিন, অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং অনশনরত শিক্ষার্থী ও উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশের হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ভার বহন।

এর মধ্যে গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদকে সরিয়ে নেয়া হয়। যদিও অসুস্থতার কারণে তাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়। শাবি রেজিস্ট্রারের সই করা এক আদেশে জহির উদ্দিনের বদলে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক আমিনা পারভীনকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়।

অনশন ভাঙার ১৫ দিন পর দাবির বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু দাবি পূরণ হয়েছে। ছাত্র উপদেশ পরিচালককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক শিক্ষার্থীরা জামিন পেয়েছেন। তবে আমাদের মূল যে দাবি, উপাচার্যের পদত্যাগ সেটি এখনও পূরণ হয়নি।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, ২৭ জানুয়ারির মধ্যে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেয়া হবে। কিন্তু এখনও মামলা তোলা হয়নি। এ ছাড়া ২০০টির বেশি মোবাইল নম্বর ও বিকাশ-নগদ অ্যাকাউন্ট এখনও বন্ধ রাখা হয়েছে।’

বাশার বলেন, ‘জাফর ইকবাল স্যার আমাদের বলেছিলেন তাকে (উপাচার্য) সরানোর প্রক্রিয়ার দু-তিন মাস সময় লাগতে পারে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হবে। তাই আমরা দ্রুত সময়ে তার পদত্যাগ চাই।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়গুলো এখন আমাদের হাতে নেই। এগুলো সরকারের হাতে চলে গেছে। সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মিলেই একটি সিদ্ধান্ত আসবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কবে আসবে, তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘শুনেছি শিক্ষামন্ত্রী আমাদের ক্যাম্পাসে আসতে পারেন। তিনি এলে হয়তো একটা সিদ্ধান্ত হবে।’

তবে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘আমরা সংবাদ সম্মেলন করে আলোচনার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে শাবিতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তবে তার তরফ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাইনি। শুনেছি তিনি কিছু পারিবারিক সমস্যায় আছেন। আমরাও তার অপেক্ষায় আছি।’

সোমবার সন্ধ্যায়ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক। তারা আন্দোলনকারীদের জানান, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আবারও সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে তারা আলাপ করবেন।

এসব বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কথা বলতে বুধবার তার ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এ বিভাগের আরো খবর