বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হিজাব ইস্যুতে কর্ণাটকের আন্দোলনে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সংহতি

  •    
  • ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৬:১৩

ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন বলেন, ‘পোশাকের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার কারণে ভারতের শিক্ষার্থীরা যে প্রতিবাদ জারি রেখেছে তার প্রতি আমরা সংহতি জানাই। পোশাকের স্বাধীনতা যেখানেই কেড়ে নেওয়া হবে সেখানেই আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াবো।’

ভারতের কর্ণাটকের একটি কলেজে ছাত্রীদের হিজাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদে রাজ্যটিতে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বুধবার সংহতি সমাবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অধিকার পরিষদ।

সমাবেশে বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। এসময় তারা ‘সলিডারিটি ফ্রম বিডি’, ‘হিজাব ইজ মাই চয়েস’, ‘পোশাকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করো’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

সমাবেশে জয়দেব চন্দ্র রায় নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা রাষ্ট্রীয়ভাবে দেয়া হচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে আমি লজ্জাবোধ করছি। আমি মনে করি আমার মা বা বোন যদি বোরখা পরতে চাই তাহলে তারা পরতে পারে। যারা এটি করছে তাদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ আহসান বলেন, ‘পোশাকের স্বাধীনতা থাকা উচিত। শুধু ভারত নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও নারী শিক্ষার্থীরা পোশাকের কারণে বিভিন্ন কটু কথার শিকার হন। আমরা বলতে চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও যার যার পছন্দের উপর ভিত্তি করে পোশাক পরার স্বাধীনতা থাকতে হবে। ভবিষ্যতে যদি কোনো শিক্ষার্থীকে হিজাব পরার কারণে বাধা দেয়া হয় বা কটু কথা শোনানো হয় আমরা সেগুলোর ডকুমেন্টশন করবো। আমরা চাই না কেউই হিজাব বা অন্য কোনো পোশাক পরার কারণে সমস্যায় পড়ুক।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ‘বোরখাকে মুসলিম আইডেন্টিটি হিসেবে বিবেচনা করে এটি নিষিদ্ধ করা ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদ ছড়িয়ে দেয়ার একটা চাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও হিজাব বা বোরখা পরার কারণে যেমন কটূক্তি শুনতে হয় তেমনি টিশার্ট পরার কারণেও কটু কথা শুনতে হয়। আর ওয়েস্টার্ন পোশাক পরে যারা আসে তারাও নানা রকম বুলিংয়ের শিকার হয়। আমরা বলতে চাই, মেয়েরা কোনো পোশাক পরবে বা পরবে না সেটি তাদের নিজস্ব পছন্দের বিষয়। এখানে কারও হস্তক্ষেপ আমরা মেনে নেব না।’

সমাপনী বক্তব্যে ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন বলেন, ‘ভারতের যে ঘটনা নিয়ে আজ আমরা সংহতি জানাতে দাঁড়িয়েছি এই ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব, বোরখা বা টিশার্ট পরে আসার কারণেও শিক্ষকদের হাতে নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার শিকার হতে হয়। কোনো শিক্ষার্থীর পোশাকের স্বাধীনতাকে খর্ব করা চলবে না।

‘পোশাকের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার কারণে ভারতের শিক্ষার্থীরা যে প্রতিবাদ জারি রেখেছে তার প্রতি আমরা সংহতি জানাই। পোশাকের স্বাধীনতা যেখানেই কেড়ে নেয়া হবে সেখানেই আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াবো।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সালেহ উদ্দীন সিফাত সমাবেশে সঞ্চালনা করেন। সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্য থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা পর্যন্ত মিছিল করেন।

উদুপি জেলার একটি সরকারি কলেজে গত ৩১ ডিসেম্বর পোশাক নিয়ে বিধিনিষেধ দেয়া হয়। এতে মুসলিম ছাত্রীরা ক্লাস চলাকালে হিজাব বা নেকাব পরে থাকতে পারবেন না বলে জানানো হয়। তবে ক্লাস শেষে বা শুরুর আগে পর্দা করতে আপত্তি নেই বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

১৯৮৫ সাল থেকে এই কলেজ ছাত্রীদের ড্রেস কোড- চুড়িদার কিংবা দোপাট্টা। কিন্তু অনেক মুসলিম ছাত্রী ড্রেস কোড অনুযায়ী পোশাক পরে তার ওপর হিজাব বা নেকাব পরে আসতেন।

কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই দিনই প্রতিবাদ করেন ছয় শিক্ষার্থী। সময়ের সঙ্গে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

মুসলিম ছাত্রীরা বলছেন, তারা বহু বছর ধরে হিজাব পরেই ক্লাস করছেন, এটি তাদের ধর্মীয় বিধানের অঙ্গ।

তবে হিজাব পরার পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ অনেক জায়গাতেই সহিংস রূপ নেয়।

হিজাব পরার বিরোধিতা করতে দেখা গেছে কয়েকটি কট্টর হিন্দু সংগঠনকে। কিছুদিন আগে কোপ্পা জেলার একটি কলেজের ছাত্ররা জাফরান রঙের স্কার্ফ পরে ক্লাসে এসে হিজাব পরার প্রতিবাদ করেন।

হিজাব বিতর্কের অবসান ঘটাতে ৫ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয় রাজ্য সরকার। নির্দেশনা অনুযায়ী, স্কুল ও কলেজে সমতা অখণ্ডতা এবং জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে এমন পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, শিক্ষার্থীদের কলেজ উন্নয়ন কমিটি বা প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগের অধীনে আসা প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোর প্রশাসনিক বোর্ডের আপিল কমিটির নির্বাচিত পোশাক পরতে হবে।

হিজাব নিয়ে বিতর্কে তৈরি হওয়া উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার মঙ্গলবার তিন দিনের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে।

এ বিভাগের আরো খবর