দেশে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে উৎপাদনমুখী শিল্প খাতে করপোরেট করহার আরও কমানোর প্রস্তাব করেছে ব্যবসায়ীদের প্রভাবশালী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই)।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বুধবার দুপুরে রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ প্রস্তাব দিয়েছে এমসিসিআই।
চেম্বার নেতারা বলেছেন, ভারতে উৎপাদনমুখী শিল্প খাতের জন্য বেশি কর প্রণোদনা দেয়া হয়। ভিয়েতনামেও একই সুবিধা দেয়া আছে। বাংলাদেশে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ভারত এবং ভিয়েতনামের মতো কর কাঠামো নির্ধারণ করা যেতে পারে।
সে প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘পরপর দুই অর্থবছর করপোরেট কর কমানো হয়েছে। বর্তমানে কর্পোরেট কর ৩০ শতাংশ। আমি মনে করি, কর্পোরেট কর আরও কমানোর যৌক্তিকতা আছে, কিন্তু একটা ঝুঁকি আছে।
‘রাজস্ব কমে যেতে পারে। কর আরও কমালে যে অভিঘাত আসবে, তা সইবার মতো ক্ষমতা আছে কি না, ভেবে দেখতে হবে।’
করহার আস্তে আস্তে কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষার জন্য যা যা করা দরকার, তাই করা হবে।’
মেইড ইন বাংলাদেশের ধারণা আগামী বাজেটও অব্যাহত থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা রাজস্ব প্রশাসন সহজ করতে চাই। একমাত্র অটোমেশনই পারে এ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে। আমরা সেদিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।’
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও জানান, রাজস্ব আদায় করবে মেশিন। আর কর্মকর্তারা গবেষণা কাজ করবে।
এনবিআরের নতুন সম্প্রসারণের প্রস্তাবে গবেষণা বিভাগকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আসবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এর জন্য কর নেট বাড়াতে হবে। কারণ নেট যত বাড়বে, রেট তত কমবে।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করপোরেট করহার এখনও বেশি। শিল্প খাতকে প্রতিযোগিতা করতে হলে এই হার কমাতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর দেশের করকাঠামো কেমন হবে, তা নিয়ে এখন থেকে কাজ শুরু করতে হবে।’
সৎ ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য এনবিআরের চেয়ারম্যানকে বিশেষ অনুরোধ করেন নিহাদ।
তিনি বলেন, ‘লেবু বেশি চিপলে তিতা হয়ে যায়। যারা ট্যাক্স ফাঁকি দেয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এমসিসিআইয়ের নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে উৎপাদনমুখী যেসব শিল্প খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, তাদের জন্য কম হারে কর নির্ধারণ করা আছে।’
ভারত এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশে কর কাঠামো নির্ধারণের প্রস্তাব করেন তিনি।
এমসিসিআইয়ের অপর সদস্য হাবিবুল্লাহ করিম বলেন, ‘করদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে দূরত্ব আছে। এই দূরত্ব কমাতে হবে।
‘উভয়ের মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস কাজ করে। কর্মকর্তাদের আচরণ এমন যেন সব ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স ফাঁকি দেয়। এই মানসিকতা দূর করতে হবে।’
এমসিসিআই সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অব্যাহতি চাই না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনী চাই, যাতে করে আইন সহজ এবং করবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হয়।’
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এনবিআরের সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক, সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা ও সদস্য (আয়কর নীতি) সামসুদ্দিন আহমেদ।