সরকারের দেয়া ভর্তুকি কমিয়ে আনতে পানির দাম ২০ শতাংশের বেশি বাড়াতে চায় ঢাকা ওয়াসা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির এমডি তাকসিম এ খান এ মন্তব্য করেন।
তাকসিম বলেন, ‘সরকার যদি ভর্তুকি দেয় তাহলে পানির দাম বাড়ানোর দরকার নাই।’
কবে নাগাদ পানির দাম বাড়ানো হচ্ছে সেটি না জানালেও চলতি বছরেই বাড়তি দামে নাগরিকদের পানি কিনতে হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে প্রতি এক হাজার লিটার পানির জন্য আবাসিক গ্রাহকরা ঢাকা ওয়াসাকে দেন ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। ২০ শতাংশ দাম বাড়ালে আবাসিক গ্রাহকদের এক হাজার লিটার পানি কিনতে ব্যয় করতে হবে ১৮ টাকা ২১ পয়সা।
এ ছাড়া বাণিজ্যিক সংযোগের জন্য ১ হাজার লিটার পানি কিনতে ব্যয় করতে হয় ৪২ টাকা। ওয়াসার প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০ শতাংশ দাম বাড়লে ১ হাজার লিটার পানি কিনতে ব্যয় করতে হবে ৫০ টাকা ৪০ পয়সা।
পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়াতে ওয়াসাকে সরকারের অনুমতি নিতে হয় না। ৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পর্যাপ্ত নয় জানিয়ে ওয়াসার এমডি জানান, তারা ভর্তুকি শতভাগ কমাতে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। অবশ্য সংস্থাটি ২০ শতাংশের বেশি মূল্যবৃদ্ধি চান।
করোনা মহামারির মধ্যে এই দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পানির দাম বাড়াতে চাই না, সরকারের ভর্তুকি কমাতে চাই।’
সংস্থাটির বিশেষ বোর্ড সভায় সোমবার ঢাকায় নগরবাসীকে সরবরাহ করা পানির দাম ৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করে ঢাকা ওয়াসা। এক দিন পর সংবাদ সম্মেলনে তাকসিম খান বলেন, ‘আমরা চাই শতভাগ ভর্তুকি কমাতে।’
গত সোমবার রাজশাহীতে ওয়াসার পানির দাম তিন গুণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। দামবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানায় রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
গত বছরের ২৫ মে ঢাকা ওয়াসা পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছিল। যাতে আবাসিকে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা পয়সা থেকে বেড়ে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা হয়। আর বাণিজ্যিক সংযোগে প্রতি ইউনিট পানির দাম ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা করা হয়।
২০২০ সালের এপ্রিলেও পানির দাম বাড়িয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। তখন আবাসিকে প্রতি ইউনিটের দাম বেড়েছিল ২ টাকা ৯০ পয়সা। এর আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, ২০১৮ সালের জুলাইতে, ২০১৭ সালের অগাস্টে পানির দাম বাড়ায় ওয়াসা।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমারসহ সংস্থাটির পরিচালক উন্নয়ন আবুল কাশেম উপস্থিত ছিলেন।
ওয়াসার এমডি তাকসিম খান বলেন, ‘পানির যেটি প্রকৃত উৎপাদন খরচ, আমরা তার চাইতে কম মূল্যে দিচ্ছি। আন্ডারগ্রাউন্ড পানির উৎপাদন খরচ কম। সার্ফেস ওয়াটারের ক্ষেত্রে পানির উৎপাদন খরচ বেশি।’
তিনি বলেন, ‘ওয়াসার বোর্ড সভায় পানির মূল্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ পানির উৎপাদন খরচ বেশি, কিন্তু বিনিময় মূল্য কম। সরকার ভর্তুকি দিয়ে চালাচ্ছে৷
‘ভর্তুকি হ্রাস করার জন্য কি করা যায় সেটা নিয়ে আমরা প্রতি বছর আলোচনা করি। তারই অংশ হিসেবে বোর্ড সভায় আলোচনা হয়েছে৷’
সরকারের বহু সংস্থা আছে, যারা সরকারের দেনা পরিশোধ করে না বলে দাবি করেন তাকসিম এ খান। বলেন, ‘ওয়াসাই একমাত্র সংস্থা যাদের কোনো ঋণ নাই। ঋণের কোনো কিস্তি বকেয়া নাই।’
রাজধানীর অভিজাত, মধ্যম আয় ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আলাদা আলাদা দাম নির্ধারণের ইচ্ছার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিনটা ক্যাটাগরিতে পানি দাম নির্ধারণ করতে চাই। আমাদের এটার রিসার্চ চলছে।’
ওয়াসার পানির দাম আবার বাড়ান নিয়ে সংস্থাটির এমডির সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মন্ত্রীদের কথা শুনলে মনে হয় দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো আছে। সাধারণ মানুষের অবস্থা ভালো মনে হয় না। আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। এরকম পরিস্থিতিতে পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব কোনভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়।’
নায্যতার মানদণ্ডেও এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে যোগ করেন তিনি।
ওয়াসার এমডিকে সুপেয় পানির শরবত পান করাতে চেয়ে আলোচনায় আসা রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব সম্পর্কে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মত ওয়াসাও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। কী কারণে পানির দাম বাড়ছে সেটা জনগণকে আগে জানাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি ওয়াসার অনেক প্রকল্পে দুর্নীতি হয়। সে দুর্নীতির টাকা জোগান দিতেই জনগণের কাছ থেকে মূল্যবৃদ্ধি নামে টাকা নেয়া হবে।’