বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুবল শীল যেভাবে বদলে গিয়ে মেঘা শর্মা

  •    
  • ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১২:৩২

মেঘা শর্মা বলেন, ‘ছোট বেলায় প্রায়ই ভাবতাম আমি কে? ছেলে নাকি মেয়ে? শৈশবে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গেলে আমার আচরণ দেখে তারা ঠাট্টা করত। হিজরা বলে খেপাত। অনেক চেষ্টা করেও নিজের আচরণ বদলাতে পারিনি। কারণ মেয়েদের মতো করে থাকতে আমার ভালো লাগত।’

ছেলের শরীর নিয়ে জন্ম মেঘার। তবে শৈশব থেকেই আচরণ ছিল মেয়েদের মতো। কপালে টিপ, হাতে চুড়ি, পায়ে আলতা লাগাতে বেশ ভালো লাগতো তার। ছোট্ট মেঘার মনে একটি প্রশ্ন বাববার ঘুরপাক খেত, আসলে সে ছেলে নাকি মেয়ে?

নিজের সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন বড় হয়ে। আর তাই নিজের মতো করে বাঁচতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিজেকে পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তর করেছেন মেঘা।

এটি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ থুমনিয়া নাপিতপাড়া গ্রামের সুবল শীল থেকে রূপান্তরিত নারী হওয়া মেঘা শর্মার গল্প।

২৭ জানুয়ারি ১৯৯৯ সালে নরসুন্দর বাবা জগেশ শীল ও মা আলো রানীর ঘরে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক সন্তান। বাবা-মা সন্তানের নাম দেন সুবল শীল। সন্তান যতই বড় হতে থাকে তার আচার-আচরণ মেয়েদের মতো হয়ে ওঠে। সুবলকে নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়েন বাবা-মা।

মা আলো রানী বলেন, ‘সুবল যখন ছোট তখন থেকে তার আচরণ মেয়েদের মতো। মেয়েদের মতো সাজগোজ করতে তার ভালো লাগত। আমরা অনেক চিন্তিত ছিলাম। অনেক চেষ্টা করেও তার আচরণ পাল্টাতে পারিনি। এ জন্য অনেক গালমন্দও করতাম। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে আমার ছেলে এখন রূপান্তরিত মেয়ে।’

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মেঘা শর্মা। ছবি: নিউজবাংলা

নিউজবাংলাকে মেঘা বলেন, ‘ছোট বেলায় প্রায়ই ভাবতাম আমি কে? ছেলে নাকি মেয়ে? শৈশবে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গেলে আমার আচরণ দেখে তারা ঠাট্টা করত। হিজরা বলে খেপাত। অনেক চেষ্টা করেও নিজের আচরণ বদলাতে পারিনি। কারণ মেয়েদের মত করে থাকতে আমার ভালো লাগত।

‘সে সময় অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কারো কোনো সহযোগিতা পেতাম না। স্কুল জীবন শেষ করে সিদ্ধান্ত নিলাম নারী হওয়ার। এরপর প্রথমে দেশেই একটি হাসপাতালে হরমোন সংক্রান্ত চিকিৎসা শুরু করি ২০২০ সালে। চিকিৎসার শুরুতে শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দিলে পরে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া শুরু করি। ’

তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে লিঙ্গ পরিবর্তন করে নিজের ইচ্ছেমত বাঁচতেই সুবল শীল থেকে মেঘা শর্মা হয়েছি। এখন আমি ভালো আছি। তবে এখনও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রয়েছি।

‘ঢাকায় কবি নজরুল সরকারি কলেজে রসায়ন বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করে নিজের ও পরিবারের পাশে আছি।’

মেঘা বলেন, ‘রূপান্তরিত নারী হওয়ার সিদ্ধান্তে প্রথমে রাজি হননি বাবা-মা। পরে সন্তানের সুখের কথা চিন্তা করে সন্তানের ইচ্ছাকেই মেনে নিয়েছেন তারা। এখন পরিবারের সবার সঙ্গে মিলেমিশে আছি আমরা।’

মেঘার পরিবারে বাবা-মা, দাদিসহ রয়েছে আরও একভাই ও এক বোন। তারাও মেঘাকে সহযোগিতা করছেন বলে জানিয়েছেন মেঘা।

ছেলে থেকে রূপান্তরের পর মেঘাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে এলাকাবাসী। ছবি: নিউজবাংলা

মেঘা শর্মা জানান, চিকিৎসার সময়ে লিঙ্গ পরিবর্তনের ব্যাপারটি পরিবার ছাড়া সবার কাছে গোপন রেখেছিলেন তিনি। অনেক অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে এলে সবাই তাকে দেখতে ভিড় জমায়। অনেকে খারাপ মন্তব্যও করে। আবার অনেকে তাকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল আমার ইচ্ছাশক্তি আর স্বপ্ন। আমি আমার পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু করতে চাই। সমাজের অধিকাংশ মানুষ মনে করছে আমি এখন সমাজের বোঝা। কিন্তু কাজ দিয়ে এ ধারণা বদলাতে চাই।’

নিজেকে একজন এয়ার হোস্টেজ হিসেবে দেখতে চান মেঘা শর্মা। পাশাপাশি করতে চান মডেলিংও। সেই সঙ্গে নিজে নেতৃত্ব দিয়ে রূপান্তরিত নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে চান।

স্থানীয় তাপস রায় বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই সুবলের কথা ও চলাফেরা মেয়েদের মতো ছিল। এমন স্বভাবের জন্য তাকে নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করত। পরিবার অনেক চেষ্টা করেও তার স্বভাব বদলাতে পারেনি।’

জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক সাংস্কৃতি কর্মী রেজওয়ানুল হক রিজু মনে করেন, মেঘা শর্মার পরিচয় তিনি একজন মানুষ। তার ইচ্ছা, তার স্বপ্ন পূরণ করতে সমাজের সব মানুষের এগিয়ে আসা উচিৎ। তাকে কটাক্ষ না করে তাকে সহযেগিতা করা উচিৎ।

তিনি বলেন, ‘তার সমঅধিকার নিশ্চিত হবে সমাজে এটাই প্রত্যাশা করি। ’

এ বিভাগের আরো খবর