‘ঝাউবনে আর গাছ নাই, আনন্দের আর সীমা নাই’ কিংবা ‘আর চাইনা ছায়ায় ঘেরা গাছ, পিচের রাস্তায় হাঁটব বারো মাস’- এমন অদ্ভূত সব স্লোগান ছিল পটুয়াখালীর শিক্ষার্থীদের মুখে। নেচে গেয়ে আনন্দ মিছিল করে তারা মিষ্টি বিতরণও করেছেন।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে শিক্ষার্থীরা গাছ কাটাকে উৎসাহিত করছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সেই কর্মসূচিতে তারা আসলে কাছ কাটাকে ব্যঙ্গ করছিলেন।
পটুয়াখালীর শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রম ওই প্রতিবাদে অন্যান্য স্লোগানের মধ্যে ছিল- ‘উন্নয়নের রাস্তায়, গাছ কাটো সস্তায়’ ও ‘বৃক্ষহীন এই শহরে, অক্সিজেন খুঁজবে সিলিন্ডারে’।
উন্নয়নের দোহাই দিয়ে শহরের সার্কিট হাউসসংলগ্ন ঝাউবনের গাছ কেটে ফেলায় গত ২৩ জানুয়ারি সকালে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে প্রতিবাদ মিছিলটি শুরু হয় এবং ঝাউতলায় গিয়ে শেষ হয়।
পটুয়াখালীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ভিন্নধর্মী এই প্রতিবাদে অংশ নেন। মিছিল শেষে মানববন্ধনও করেন তারা।
এ সময় পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম মানিক ঝাউবন কেটে ফেলার প্রতিবাদে ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘শহরের সৌন্দর্যবর্ধন ও ল্যাম্প পোস্টের আলো যেন সরাসরি রাস্তায় পড়ে, তাই ঝাউবনের গাছগুলোকে কেটে ফেলা হয়েছে। এতে আমরা খুব খুশি। শীতের সময় কত মানুষ কষ্ট করে। গাছ কেটে আমরা পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়িয়ে সবার শীতের কষ্ট লাঘব করতে পারি।’
সেদিনের সেই কর্মসূচি নিয়ে মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে মানিক বলেন, ‘আমাদের এই প্রতিবাদ কাউকে ছোট করা বা কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়। প্রতিবাদটা ছিল শুধু কুঠারের বিরুদ্ধে। যে কুঠার গাছগুলো কেটেছে। আমরা কারও প্রতিপক্ষ হতে চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করেছি, গাছ যা কাটা হয় সেটা তো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু ঝাউতলার বাকি যে গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলো যাতে কাটা না হয়। এ জন্য আমাদের এই ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন।’
মানিক জানান, ওই আন্দোলনে কারও একক নেতৃত্ব ছিল না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়েই প্রতিবাদ করেছেন।
ঝাওগাছ কাটার বিষয়ে পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদদীন আরজু বলেন, ‘গাছগুলো বন বিভাগ থেকে মার্কিং করে কাটা হয়েছে। তবে যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়েছে তার চেয়ে কয়েক গুণ গাছ লাগানো হচ্ছে।’
পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, পৌর কর্তৃপক্ষের অনুরোধেই বন বিভাগ গাছগুলো পরিমাপ করে দিয়েছে। প্রথমে ১৬৩টি গাছ কাটার কথা থাকলেও একটি কমিটি গঠনের পর সেখান থেকে ৬৩টি গাছ কাটার সুপারিশ করা হয়।