বগুড়ার শাজাহানপুরের দুই গ্রামে শিয়ালের আক্রমণে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে লাঠি নিয়ে গ্রামবাসী পাহারা দিচ্ছেন।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য নজরুল ইসলাম নয়ন।
গ্রামবাসীর বরাতে তিনি জানান, গ্রামের ঝোঁপঝাড়ে ও জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা শিয়ালগুলো হঠাৎ করেই মানুষ দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে। অনেকজনকে কামড় দিয়েছে। পরে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে চারটি শিয়াল মেরে ফেলেছে।
উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের ফুলকোট ও রামপুরে গত চার দিন ধরে এমন অবস্থা চলছে।
ইউপি সদস্য আরও জানান, সোমবার ভোরে ফুলকোর্ট দক্ষিণপাড়া গ্রামের মসজিদ থেকে ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনজন। পথে হঠাৎ করে কয়েকটি শিয়াল ছুটে এসে আক্রমণ করে। এ সময় তিনজন শিয়ালের কামড়ে আহত হন।
আহত ওই তিন জন হলেন- সাইদুর রহমান, জিয়াউর রহমান, আব্দুর রহমান।
একই দিন রাতে ফুলকোর্ট গ্রামের চা স্টলে আড্ডা দিচ্ছিলেন স্থানীয় কয়েকজন। সেখানেও একইভাবে কয়েকটি শিয়াল ছুটে তিনজনকে কামড় দেয়। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই শিয়ালগুলো পালিয়ে যায়।
এর আগে রোববার সন্ধ্যায় এশার নামাজের পর দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিফাত বাড়ি ফেরার সময় শিয়ালের আক্রমণের শিকার হয়।
১৫ বছরের সিফাত বলেন, ‘একা বাড়ি ফিরছিলাম। এমন সময় একটি শিয়াল এসে লাফিয়ে আমার ডান পাশে পেটের দিকে কামড় দেয়। পরে চিৎকার দিলে শিয়ালটি পালিয়ে যায়। বাসায় এসে জানানোর পর ভ্যাকসিন দেয়া হয়।’
ফুলকোর্ট গ্রামের ৪৫ বছরের নাজমা খাতুন রোববার সকালে শিয়ালের আক্রমণের শিকার হন। তিনি বলেন, ‘সকালের দিকে উঠানে বাঁধা গরুকে শিয়াল আক্রমণ করে। এটা দেখে লাঠি নিয়ে গরুকে বাঁচাতে যাই। এ সময় শিয়াল আমার ডান হাতে কামড় দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ভ্যাকসিন দিয়েছি।’
শনিবার থেকে শিয়ালের আক্রমণের এমন ঘটনা শুরু হয়। পরের দিন বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে গ্রামবাসী রাত নামলেই লাঠি হাতে বের হচ্ছেন। প্রায় চারদিন ধরে অনেকে দলবদ্ধভাবে লাঠিসোঁটা নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। এ ঘটনায় বেশ কিছু ক্ষুব্ধ মানুষদের হাতে দুই গ্রামের চারটি শিয়াল মারা পড়ে বলে জানান গ্রামবাসী।
ফুলকোর্ট গ্রামের বাসিন্দা আব্দুন নূর মুন বলেন, ‘চারদিন ধরে ফুলকোর্ট ও রামপুর গ্রামে শেয়াল আক্রমণ করছে। দিনের আলো নিভে গেলেই প্রাণীগুলো লোকালয়ে ঢুকছে। যখন যাকে সামনে পায় কামড়ে দেয়। তাদের মোকাবিলা করতে গ্রামের সবাই এখন হাতে লাঠি নিয়ে বের হন।’
ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘আহতদের অনেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। গ্রামবাসীকে হাতে লাঠি রাখার কথা বলে দেয়া হয়েছে। তারা সন্ধ্যার পর ও ভোরে বাড়ি থেকে বের হলে হাতে লাঠি নিয়েই বের হন। এ ছাড়া বর্তমানে আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’
শিয়ালদের আক্রমণের বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন কানিস ফারজানার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বাসস্থান ও খাদ্য সংকটে থেকে শিয়ালরা মানুষের ওপর আক্রমণ করে। তবে সেই আক্রমণ কিছু সময়ের জন্য হয়ে থাকে। এভাবে দিনের পর দিন না।
কানিস ফাতেমা বলেন, ‘ওই দুই গ্রামে ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে শিয়ালগুলো জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়েছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোতারব হোসেন জানান, শিয়ালের আক্রমণের খবর পেয়েছি। তবে মোট কতজন চিকিৎসা নিয়েছেন এটা জানা নেই।
চিকিৎসার বিষয়ে বগুড়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল কর্মকর্তা সাজ্জাদ-উল-হক নিউজবাংলাকে জানান, শিয়ালের কামড়ে মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হতে পারে। এই প্রাণী যেখানে কামড় দিবে সেখানে কমপক্ষে ১৫ মিনিট সাবান পানি দিয়ে ধুঁতে হবে। পরবর্তীতে ভ্যাকসিন দেয়ার প্রয়োজন হলে চিকিৎসক জানাবেন। আর যদি ভ্যাকসিনের প্রয়োজন না হয় তাহলে শুধু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করতে হবে।