বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাকা নগর পরিবহন: শুরুতেই অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা

  •    
  • ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৯:৩৭

সম্পূর্ণ নতুন বাস নামানোর কথা থাকলেও পুরোনো বাসই মেরামত করে চালানো হচ্ছে। বাসগুলো থাকে ধুলা-ময়লায় ঠাসা। সড়কের পাশে পৃথক যাত্রীছাউনি থাকার কথা থাকলেও অনেক জায়গায় তা এখনও হয়নি। আবার অনেক জায়গায় পুরোনো ভাঙাচোরা যাত্রীছাউনি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। নির্ধারিত বাস স্টপেজে যাত্রী উঠা-নামার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বাসগুলো শেষ গন্তব্য কাঁচপুরে না গিয়ে চিটাগাং রোড পর্যন্ত গিয়েই থেমে যাচ্ছে।

ঢাকা নগর পরিবহন নামে ফ্র্যাঞ্চাইজি বাসের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয় গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর। যাত্রীসেবায় আমূল পরিবর্তনের প্রত্যাশা থেকেই এমন উদ্যোগ। ইতিমধ্যে সোমবার আরো তিন রুটে এই পরিবহন চালুর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

বাস্তবতা হলো, পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু করা প্রথম রুটের অপারেশনেই দায়সারা ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। এই পরিবহনের যাত্রী হয়ে সরেজমিনে পুরো রুট ঘুরে চোখে পড়েছে নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা। সেসবের ছবি ও ভিডিও রয়েছে নিউজবাংলার কাছে।

সম্পূর্ণ নতুন বাস নামানোর কথা থাকলেও পুরোনো বাসই মেরামত করে চালানো হচ্ছে। বাসগুলো থাকে ধুলা-ময়লায় ঠাসা। সড়কের পাশে পৃথক যাত্রীছাউনি থাকার কথা থাকলেও অনেক জায়গায় তা এখনও হয়নি। আবার অনেক জায়গায় পুরোনো ভাঙাচোরা যাত্রীছাউনি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।

নির্ধারিত বাস স্টপেজে যাত্রী ওঠা-নামার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। যেখানে-সেখানে যাত্রী নামানো-ওঠানো হচ্ছে। আর কাউন্টারের বাইরে থেকে এভাবে যাত্রী বহনের কারণে ভাড়ার বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট গাড়ির চালক ও সহকারীর পকেটে।

ঢাকা নগর পরিবহনের ঘাটারচর-চিটাগাং রোড রুটে যাত্রীছাউনির অভাবে রাস্তায় চলছে টিকিট বিক্রি। ছবি: নিউজবাংলা

দুই সিটি করপোরেশনের বাস রুট রেশনালাইজেশনের এই সেবা পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয় কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত। কিন্তু বাসগুলো শেষ গন্তব্য কাঁচপুর পর্যন্ত যাচ্ছে না। এক স্টেশন আগে চিটাগাং রোড পর্যন্ত গিয়েই থেমে যাচ্ছে।

ঢাকা নগর পরিবহনের বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে গত শনিবার ঘাটারচর থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত যান এই প্রতিবেদক।

পুরো যাত্রাপথে ১৫টি স্টপেজ থেকে যাত্রী তোলা হয়, যেখানে আগে নেয়া হতো ২১টি স্টপেজ থেকে। কয়েকটি স্টপেজে টিকিট কাউন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানোর কথা না থাকলেও বছিলা, মতিঝিল, টিকাটুলি, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়াসহ বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে বাসে যাত্রী তোলা হয়। অথচ ওইসব স্থানে এই পরিবহনের কোনো স্টপেজ বা টিকিট কাউন্টার নেই। অবৈধভাবে তোলা এই যাত্রীদের ভাড়ার টাকা হাতে হাতে নেন চালক। কর্তৃপক্ষের নিষেধ থাকলেও চলন্ত অবস্থায় চালকের হাতে প্রায় সময়ই দেখা গেছে জ্বলন্ত সিগারেট।

নিয়ম ভেঙে যাত্রী ‌ওঠাচ্ছেন কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই চালক বলেন, ‘আমি তো মাত্র ৫-১০ টাকা নিছি। আর যাত্রী নিছি শনির আখড়ার পরে আইসা।’

শনির আখড়ার আগেও যাত্রী নিয়েছেন জানালে তার উত্তর, ‘একটু চা-নাশতা খাওয়ার জন্য যাত্রী তুলছি। অনেক যাত্রী তো টাকাও দেয় না।

‘ভাই, দুঃখের কথা বলি। বেতন পাই মাত্র ১৭ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে ঢাকায় পরিবার নিয়ে থাকা কি আসলেই সম্ভব? ছেলে ক্লাস এইটে পড়ে। সংসার চালায়ে তার পড়াশোনার খরচ চালানো কি এই টাকা দিয়ে হয়? ১০-২০ টাকার আশায় শনির আখড়ার এইদিকে নিয়ম ছাড়া যাত্রী তুলি। পাবলিক গাড়ি চালালে মাসে অন্তত ৩০ হাজার টাকা ইনকাম করা যায়।’

শনির আখড়া স্টপেজে দেখা গেল আরেক চিত্র। দুই কিশোরী টিকিট কাউন্টারে টিকিটের টাকা দিলেও তাদের টিকিট না দিয়ে বাসে উঠিয়ে দেন টিকিট বিক্রেতা। গন্তব্যে এসে ওই দুই কিশোরী বাস থেকে নামতে গেলে চালক বাধা দেন। বলেন- টিকিট দিতে হবে, টিকিট দেখান।

ওই দুই কিশোরী ও বাসের অন্য যাত্রীরা কাউন্টার থেকে টিকিট না দেয়ার বিষয়টি জানানোর পর তাদেরকে নামতে দেন চালক।

টিকিট নেয়নি কেন জানতে চাইলে ওই দুই কিশোরীর একজন পূর্ণতা নিউজবাংলাকে বলে, ‘টিকিট দেয় নাই আমাদের। কাছাকাছি নেমে যাব বলে টিকিট চাওয়া হয় নাই। উনিও (টিকিট বিক্রেতা) দেন নাই।’

ঢাকা নগর পরিবহনের প্রায় প্রতিটি বাসের ভেতরটা থাকে ধুলা-ময়লায় একাকার। ছবি: নিউজবাংলা

নিউজবাংলার পক্ষ থেকে এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক ও বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সদস্য সচিব নীলিমা আখতারের কাছে। তিনি বলেন, ‘আপনি যেসব সমস্যার কথা বললেন তার নোট নিলাম। বাস রুট রেশনালাইজেশনের পাইলট প্রজেক্ট এটি। এ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তী রুটগুলো আমরা আরও সুন্দর করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসব সমস্যা বিআরটিএ চেয়ারম্যানের কাছে তুলব। তাছাড়া আবার যখন ড্রাইভারদের ট্রেনিংয়ের আয়োজন করব, তখন বলব। আমরা তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলেছি। ড্রেস পরে গাড়ি চালাতে বলেছি। নিয়মের কথা বলেছি। যাত্রীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করার কথা বলেছি। কাউন্টার ছাড়া যাত্রী তোলা যাবে না- এটাও তাদের বলেছি। এগুলো না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এদিকে সোমবার বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২১তম সভায় ঢাকা নগর পরিবহনের নতুন তিনটি রুট ঘোষণা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

সব জায়গায় যাত্রীছাউনি নির্মাণ শেষ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত সভায় এগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। যাত্রীছাউনি করা হচ্ছে। কেবল নারায়ণগঞ্জ অংশে আটটি যাত্রীছাউনি এখনও সম্পন্ন হয়নি। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। অনুমতি দিলেই এগুলো নির্মাণ করা হবে। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

সভায় ঢাকা নগর পরিবহন পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেকের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে ধরে দুই মেয়রই বিআরটিএ ও পুলিশের কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ জানান।

এ বিভাগের আরো খবর