বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ও মা আঁর পোয়া হডে পাইয়্যুম?’

  •    
  • ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৯:০০

‘তোরা আঁর পোয়া ন দেখস? আঁরে মা ন ডাকিব? আঁরে আম্মু ন ডাকিব? ভাত ন খুঁজিব? এন্ডে (এখানে) ঘরত আর ন বইবো? ও মা আঁর পোয়া হডে পাইয়্যুম (কোথায় পাব)?’

চট্টগ্রামে নির্বাচনি সহিংসতায় একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এভাবেই আহাজারি করছিলেন নলুয়া ইউনিয়নের মারফলা এলাকার সখিনা বেগম।

ইউপি নির্বাচনের সপ্তম ধাপে সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে সোমবার দুপুরে নির্বাচনি সহিংসতায় প্রাণ হারান কিশোর তাসিফ। সহিংসতায় এদিন বাজালিয়া ইউনিয়নে নিহত হন আরও একজন।

ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার দুপুরে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ছেলে তাসিফের মরদেহ পেয়ে এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন মা সখিনা বেগম।

সংঘর্ষের পর স্থানীয়দের বরাতে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল জানিয়েছিলেন, কেন্দ্র দখলের চেষ্টাকে কেন্দ্র করে মারফলা বোর্ডবাজার কেন্দ্রে দুপুরে নৌকার লিয়াকত আলী ও আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ সময় কিশোর তাসিফকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের লোক ভেবে তাকে কোপানো হয়।

ঘটনার পর নিহতের বাবা মো. জসিমের দাবি করেন, ওই ইউনিয়নের নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী লিয়াকত আলীর সমর্থকের ছুরিকাঘাতে তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে।

এ দিকে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী এক দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা (চেয়ারম্যান প্রার্থী লিয়াকত আলীর সমর্থক) মূলত দক্ষিণ মারফলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আসছিল। ওই কেন্দ্রে ঝামেলা করে এক-দেড় শ জনের মতো লোক মারফলা বোর্ডবাজার কেন্দ্রে আসে। সেখানে ভয়ংকর একটা পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করে তারা।

‘কিছু লোক হাতে থাকা লাঠি দিয়ে সবার দোকানে ভাঙচুর করছিল। বাকি যারা ছিল প্রায় সবার হাতে দা, ছুরি, ক্রিস এ সব ধারালো দেশীয় অস্ত্র ছিল। একজনের হাতে একনলা বন্দুকও দেখছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ সময় কেন্দ্রের আশেপাশে থাকা লোকজন পশ্চিম দিকে দৌড়াচ্ছিল। ওই ছেলেটিও (তাসিফ) তাদের পেছনে ছিল। এ সময় কেউ একজন তার গলায় কোপ দিয়ে চলে যায়। সম্ভবত তাকে আনারসের প্রার্থী মিজানুর রহমানের লোক মনে করছিল।’

আব্দুস সত্তার নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘অত্যন্ত নিরীহ একটা ছেলে। তাকে দেখলেই তো বোঝা যায় ও নির্বাচনের নও বুঝে না। সবাই বলতেছে প্রতিপক্ষ মনে করে মারছে। আমার তো মনে হয় আতঙ্ক তৈরি করার জন্য ইচ্ছে করে তাকে দা দিয়ে কোপাইছে। এভাবে মানুষকে মানুষ কোপাতে পারে?’

নিহত তাসিবের চাচা মিজানুর রহমান (সদস্য প্রার্থী) বলেন, ‘লিয়াকতের ভাইপো মাসুদের কতগুলো ছেলে কেন্দ্রে এসে লাঠি আর ক্রিস নিয়ে মানুষকে দৌড়াইতেছিল। কোনো কারণ ছাড়াই আমার ভাইপোকে গলায় কোপ দিয়ে মেরে ফেলছে তারা। যারা মারছে তারা বহিরাগত। শহর থেকে লিয়াকত তাদের নিয়ে আসছে।’

নিহত তাসিব স্থানীয় একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তার বাবা মো. জসীম উদ্দিন একজন রিকশাচালক। ঘটনার পর থেকে ছেলের মৃত্যুর জন্য নৌকার প্রার্থী লিয়াকতের লোকজনকে দায়ী করলেও কারও বিরুদ্ধে মামলা করবেন না বলে জানিয়েছেন জসিম।

এদিকে নির্বাচন ঘিরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির কথা জানালেও সহিংসতা রুখতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মককর্তা (ওসি) আব্দুল জলীলের মোবাইলে একাধিবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

তবে, থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কুমার দে ফোন ধরলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পরে ফোন দিতে বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর