১০ দিন আগে স্বামী সুরেশ শীলের মৃত্যু। বাবার মৃত্যুতে ধর্মীয় আচার পালনে চকরিয়ার মালুমঘাটের ফকিরশাহ হাসিনাপাড়ার মন্দিরে যাচ্ছিলেন মিনু রানীর সাত ছেলে ও এক মেয়ে।
যাত্রাপথে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হওয়ার সময় একটি পিকআপ তাদের চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে তিন ভাই ও পরে এক ভাইয়ের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আরও এক ভাই।
১০ দিনের ব্যবধানে স্বামী ও পাঁচ সন্তানকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় সুরেশ শীলের স্ত্রী মিনু রানী শীল। তার বুকফাটা আর্তনাদ দেখে গ্রামের মানুষেরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। কাঁদছেন সবাই।
৫০ বছরের মিনু রানী আর্তনাদ করে বলছিলেন, ‘যাদের মানুষ করেছি, তাদের নিয়ে গেছে। কাদের জন্য বাঁচব?’
ক্ষণে ক্ষণেই এমন আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়ছিলেন মিনু। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না মালুমঘাটের মানুষেরা।
মৃত সুরেশ চন্দ্র শীলের বাড়িতে দেখা যায় উঠানে সারি করে রাখা অনুপম শীল, নিরুপম শীল, দীপক শীল, চম্পক শীল ও স্মরণ শীলের মরদেহ। পাশে তাদের স্ত্রীরা বিলাপ করছেন। ডুকরে কাঁদছে তাদের ছেলে-মেয়েরাও।
প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি ছিলেন মুসলিমরাও। পাঁচ ভাইয়ের এমন মৃত্যুতে হতবিহ্বল সবাই।
নিহত ভাইদের মরদেহের সামনে স্বজনদের আহাজারি
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ওই দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত ভাইদের আরও এক ভাই রক্তিম শীল ও বোন হীরা সুশীল মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিহতদের বাবা সুরেশ শীল গত ১০ দিন আগে মারা গেছেন। এ কারণে সনাতন ধর্মমতে সুরেশের ৭ ছেলে ও এক মেয়ে ভোরবেলা ক্ষৌরকর্ম (মাথার চুল ফেলে দেয়া) সম্পন্ন করতে ফকিরশাহ হাসিনাপাড়ার তিন রাস্তার স্থানীয় মন্দিরে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যেই এ দুর্ঘটনা। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের সৎকারের সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
মালুমঘাট মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুনেন্দু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাবা হারানোর পর তার ছেলেরাও বেঁচে রইল না। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো মালুমঘাট। সড়কে মৃত্যুর এই মিছিল কবে থামবে জানা নেই আমাদের।’
প্রধান শিক্ষক জানান, খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন চকরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ানও। তিনি শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন।