স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে বড় কর্মসূচির সংশোধনী প্রস্তাবসহ ৩৭ হাজার ৫০৭ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ের ১১টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভাশেষে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন দিক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এসময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমসহ পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন বিভাগের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, অনুমোদিত ১১টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩৭ হাজার ৫০৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি অর্থায়ন হবে ৩৬ হাজার ২৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ১ হাজার ৪৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (চতুর্থ এইচপিএনএসপি) প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় অনেকগুলো প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
‘শুরুতে এ কর্মসূচির ব্যয় ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। ব্যয় বেড়েছে ৩০ হাজার ৪৪৮ টাকা। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্প শেষ হবে। এই প্রকল্পে ১৮ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা ঋণ ও অনুদান পাওয়া যাবে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা থেকে।’
প্রকল্পটির আওতায় বিভিন্ন কাজের মধ্যে রয়েছে- প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম সম্প্রসারণ; মা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা ও মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম সম্প্রসারণ; স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বীমা পাইলটিং ও সম্প্রসারণ, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি; পরিবার পরিকল্পনা সেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা ও পুষ্টি সেবার আওতা বাড়ানো; কোভিড-১৯, ডেঙ্গু ও ম্যালিরিয়াসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ।
এ ছাড়া রয়েছে- ক্যান্সার, কিডনি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও মানসিক স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ; আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত উন্নয়ন; প্রশিক্ষণ/উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে স্বাস্থ্য শিক্ষার সম্প্রসারণ; স্বাস্থ্য খাতের সব পর্যায়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন; বিকল্প চিকিৎসা সেবার সম্প্রসারণ; নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষা/সেবার মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; ওষুধ প্রশাসন শক্তিশালী করা; স্বাস্থ্য খাতের ডিজিটাইজেশন, তথ্য ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সমন্বয় জোরাদার ও মূল্যায়ন এবং এ খাতের গবেষণা ও সচেতনতামূলক কাজের আওতা বাড়ানো।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কী পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে সাধারণ মানুষ তা জানুক। এজন্য প্রকল্পগুলোর বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ফটকসহ অন্য জায়গায় বড় মনিটরে প্রদর্শন করা হচ্ছে।’
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- মোংলা কমান্ডার ফ্রোটিলা ওয়েস্টের (কমফ্লোট ওয়েস্ট) অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প; চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ (ত্রিশাল) মিলিটারি ফার্ম আধুনিকায়ন প্রকল্প; আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চারলেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্প; বাংলাদেশের ১০টি অগ্রাধিকারভিত্তিক শহরে সমন্বিত স্যানিটেশন ও হাইজিন।
এ ছাড়া রয়েছে ঢাকা পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধিভুক্ত এলাকায় বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা, সড়ক মেরামতে ব্যবহৃত আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও ম্যাকানাইজড পার্কিং স্থাপনের মাধ্যমে যানজট নিরসনকরণ; ঢাকার আজিমপুরস্থ মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ডাক্তার, কর্মকর্তা, সিনিয়র স্টাফ নার্স ও প্রশিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল/ডরমিটরিটরি নির্মাণ; শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ; গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন ও স্মার্ট কৃষি কার্ড ও ডিজিটাল কৃষি (পাইলট) প্রকল্প।