ইভ্যালির মার্চেন্ট ও ভোক্তাদের জিম্মায় শর্ত সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেলকে মুক্তি দেয়ার দাবি করেছে সংগঠনের নেতারা।
নিজেদের ব্যবসা অব্যাহত রাখা ও ঋণ পরিশোধের জন্য তারা এমন দাবি করেছে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানানো হয়েছে।
ইভ্যালি মার্চেন্ট অ্যান্ড কনজ্যুমার কোর্ডিনেশন কমিটির সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন ও কো-সমন্বয়ক সাকিব হাসান সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাকিব হাসান বলেন, ‘ইভ্যালির মার্চেন্ট ভোক্তাবৃন্দ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও সিইও রাসেলকে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দিয়ে আমাদের ব্যবসা অব্যাহত রাখা ও ঋণ পরিশোধের সুযোগ চাই।’
তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে ইভ্যালির মার্চেন্ট এবং ভোক্তাদের সমন্বয় কমিটি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রাসেলের জামিনের পক্ষে ২০ হাজার ১৮২ জন মার্চেন্ট ও ভোক্তা এ দাবি করেছেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের স্বাক্ষর জমা দেয়া হয়েছে। তাই রাসেলকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সাকিব হাসান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমরা হাজার হাজার মার্চেন্ট এবং লাখ লাখ ভোক্তার মুক্তির কথা চিন্তা করে মো. রাসেলকে আমাদের জিম্মায় জামিন দিতে আপনার যথাযথ হস্তক্ষেপ কৃতজ্ঞচিত্তে প্রার্থনা করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইভ্যালির প্রায় ৭৪ লাখ গ্রাহক ও প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি বিক্রেতা এবং ৫ হাজারের বেশি স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী ইভ্যালির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত। আমরা জানি ইভ্যালি বর্তমানে বাংলাদেশে প্রথম সারির জনপ্রিয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসে ভোক্তাদের পণ্য কেনায় উদ্বুদ্ধ করা এবং নতুন হাজার হাজার উদ্যোক্তা তৈরিতে ইভ্যালির ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য।
‘আমরা জানি কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামিমা নাসরিন এবং সিইও রাসেলকে কারাগারে রাখা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
ইভ্যালি মার্চেন্ট অ্যান্ড কনজ্যুমার কো-অর্ডিনেশন কমিটির কো-সমন্বয়ক বলেন, ‘ব্যবসার পরিধি বড় হলে কিছু অভিযোগ বা সমন্বয়হীনতা থাকতে পারে। এই সংকট মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হলে আমরা প্রায় ৫০ লাখ পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হব।
‘আমাদের বিশ্বাস এ সংকট মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সবার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করে সম্ভাবনাময় একটি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে লাখ লাখ ভোক্তার স্বপ্নপূরণ এবং হাজার হাজার উদ্যোক্তার ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হবে।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা ৩৫ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা ইভ্যালির সঙ্গে ব্যবসা করি। আমাদের এখানে বেশিসংখ্যক উদ্যোক্তার হাতেখড়ি ইভ্যালির মাধ্যমে। বর্তমানে ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও সিইও কারাগারে থাকায় আমাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
‘ই-কমার্স বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৬ সদস্যের একটি কমিটি করেছে। তারা কিছু গাইডলাইন দিয়েছে, যেখানে ই-কমার্স ব্যবসায়ে প্রতারণা প্রায় অসম্ভব। আমাদের দাবি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে জানিয়েছি।’
ইভ্যালির মালিক মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনসহ আত্মীয়দের ব্যাংক হিসাব জব্দে নোটিশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ইভ্যালি পরিচালনায় গঠিত বোর্ডের করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা এক মামলায় গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মোহাম্মদ রাসেলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এরপর তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়।