সোমবার সকাল ৯টা। ময়মনসিংহ শহরতলীতে শম্ভুগঞ্জ বাজারে ব্যাগ হাতে আসেন মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি। একবার সবজির দোকানে আরেকবার মুদি দোকানে গিয়ে দামদর করছেন। এক পর্যায়ে কিছু সবজি ও ডাল-ডিম কিনে বাড়ি ফেরেন।
কথা হয় তার সঙ্গে। জানান তার নাম আরফান আলী। দিনমজুরি করে আয় করেন।
দাম কেমন-জিজ্ঞেস করতেই বলেন, ‘আর কয়েন না। হগল দিন ৫০০ ট্যাহা (টাকা) কামাই করবার পারি। এই ট্যাহা দিয়া সংসার চালিয়ে দুই পুলাপানের পড়াশোনার খরচ দেই। কিন্তু যত দিন যাইতাছে খাদ্যপণ্যের দামও বাড়তাছে। এর লাইগ্যা (এজন্য) আমরা গরিবরা পড়ছি বিপদে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইজক্যা ৩০০ ট্যাহা লয়্যা বাজারে আইছিলাম। মাছ, গোশত (মাংস) ও তরিতরকারিসহ হগল (সকল) কিছুর দাম বাড়তি। এর লাইগ্যা কিছু তরিতরকারিসহ ডাল আর ডিম লয়্যা বাড়িত যাইতাছি। দাম না কমলে আমাদের মতো দিনমজুরদের পেডে (পেটে) তালা দিয়া রাহন লাগব।’
সোহানুর রহমান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘প্রত্যেকটি পণ্য চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
লাগামহীন মূল্যে নিম্ন আর মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন এখন বিপর্যস্ত। সবজি কেনা এখন দুরূহ ব্যাপার। তাই ডাল আর ডিমের ওপরই ভরসা প্রত্যন্ত গ্রামের খেটে খাওয়া পরিবারগুলোর।’
তিনি বলেন, ‘৬০০ টাকা নিয়ে বাজারে এসেছিলাম। এক কেজি মাছ ও কিছু তরকারি কিনেই টাকা শেষ। ১৫ দিন আগেও গরুর মাংস ৫৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ এখন দাম ৬০০ টাকা। খাসির মাংস ৯০০ টাকা। এমন চড়া দামে মাংস খাওয়াও দুরূহ ব্যাপার।’
খোলা সয়াবিন তেল গত দুই সপ্তাহে ১০ টাকা বেড়ে কেজি প্রতি ১৭০ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেল ১০ টাকা বেড়ে ১৬৫ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। সবজির দাম শীতের ভরা মৌসুমেও কেন বাড়ছে, তা নিয়ে আছে প্রশ্ন।
সবজি বিক্রেতা রশিদুল বলেন, অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
দশ টাকা করে বেড়ে চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কাঁচা মটর ৬০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, ফুলকপি ৩০ টাকা পিস, গাজর ৩০ টাকা কেজি, পেঁয়াজ পাতা ৩০ টাকা, কাঁচা কলা ৩০ টাকা হালি ও লাউ ৬০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া শিম কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ৪০টাকা, করলা ২০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, ঝিঙে পাঁচ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকা, মিষ্টি লাউ বিশ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা কেজি ও লেবু আট টাকা বেড়ে ২০ টাকা হালি।
মুদি দোকানি শাহজাহান নিউজবাংলাকে জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতের আদার দাম ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে। তবে দেশি পেঁয়াজ পাঁচ টাকা কমে ৩০ টাকা, দেশি আলু ২০ টাকা, হল্যান্ড আলু ১৫ টাকা, রসুন দেশিটা ৪০ টাকা ও ভারতের রসুন ১২০ টাকা কেজি।
এছাড়া দেশি মসুর ডাল ১১০ টাকা, মাসকলাই ৯০ টাকা, ভাঙা মাসকলাই ১৩০ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৫০ টাকা, বুটের ডাল ৮০ টাকা, খেসারি ৭০ টাকা, মটর ডাল ১২০ টাকা, মুগডাল ১৩০ টাকা, ছোলা বুট ৭০ টাকা, প্যাকেট আটা ৪০ টাকা, খোলা আটা ৩৫ টাকা, চিনি ৭৫ টাকা ও লবণ ৩০ টাকা কেজি, ফার্মের মুরগির ডিম ৩৫ টাকা হালি, হাঁসের ডিম ৫০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুরগি বিক্রেতা জালাল মিয়া জানান, ব্রয়লার ১৫০ টাকা, সোনালি ২৫০ ও কক ২৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় পাঙ্গাশের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে দুই কেজি ওজনের রুই ২৮০ টাকা, ছোট রুই ১৮০ টাকা, পাঁচশ গ্রামের তেলাপিয়া ১৬০ টাকা, বড় সিলভার কার্প ১৮০ টাকা, বড় কাতলা ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা, বড় মৃগেল ২২০, বাউশ ২২০ টাকা, বড় গ্লাসকার্প ২২০ টাকা, দেশি পুঁটি ১৬০ টাকা, রাজপুঁটি ২২০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৫০০ টাকা, শিং ৪৫০ টাকা, চাষের গুলশা ৩৫০ টাকা, টেংরা ৪০০ টাকা, মলা ৫৭০ টাকা, ছোট বাতাই ৫৭০ টাকা, মাগুর ৪০০ টাকা, চাপিলা ৩০০ টাকা, টাকি ৩৫০ টাকা, কাকিলা ৩৫০ ও ছোট পাবদা ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা হক বলেন, ‘মাঝেমধ্যে বাজারে পণ্যের সরবরাহ কম থাকলে দাম বেড়ে যায়। তবে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। যথেষ্ট পণ্য থাকার পরও পাইকাররা কারসাজি করে দাম বৃদ্ধি করার প্রমাণ মিললে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’