পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। অবকাঠামোগত সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠার ১৬ বছরেও বিশ্ববিদ্যালটিতে নেই কেন্দ্রীয় কোনো গবেষণাকেন্দ্র।
অবশেষে এ সংকট দূর হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কেন্দ্রীয় গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে এবং বেশ কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মধ্যে একমাত্র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েই নেই কোনো সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, গবেষণার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় পরিচয় হয়। গবেষণার মান যে বিশ্ববিদ্যালয়ের যত ভালো, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বাড়ে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
গবেষণার মান বৃদ্ধির জন্য সুযোগ-সুবিধা থাকতে হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফ্যাসিলিটি ডেভেলপ করা প্রয়োজন বলে মত তাদের।
গবেষকরা বলেন, গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষক ফান্ড ক্রাইসিসের মধ্যে পড়েন। অনেক সময় গবেষণার জন্য কিছু যন্ত্রপাতি কিনতে হয়। বিজ্ঞান গবেষণায় অনেক সময় স্টাডিও করতে হয়। এ ক্ষেত্রে আলাদা খরচ আছে। সব মিলিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়।
নিউজবাংলাকে এমনটাই জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি তৈরির চিন্তাভাবনা তার যোগদানের শুরু থেকেই ছিল বলে জানান তিনি।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, ‘গবেষণাকেন্দ্র করার জন্য ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। এটার প্রজেক্ট আমরা ইউজিসিতে জমাও দিয়েছি।
‘কমিটিতে লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের সাবেক ডিন, ফার্মেসি, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান, পরিকল্পনা দপ্তরের উপপরিচালক, বর্তমান ও সাবেক গবেষণা পরিচালক রয়েছেন।’
গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়েই গবেষণাকেন্দ্র থাকে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। আমরা ইউজিসিতে একটা প্রস্তাব পাঠিয়েছি। ইউজিসি অনুমোদন করেছে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। ওখানে অনুমোদন হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ৫০ কোটি টাকার একটা প্রস্তাব পাঠিয়েছি। ৫০ কোটির উপরে হলে সেটা আবার একনেকে অনুমোদন করতে হবে। ওটা ২-৩ বছর লেগে যাবে। আমাদের তো একটা কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার দরকার। সে জন্য আমরা ৫০ কোটি টাকার মধ্যেই প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। বছর খানেক সময় লাগবে।
‘আগামী বাজেটে আমাদের প্রস্তাবটি আনার জন্য ইউজিসিতে বলেছি। এখন পর্যন্ত সবকিছু ফাইনাল করিনি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়েছি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়েছি। এদের কোনো ডকুমেন্টই নাই। ওদের গঠনতন্ত্র নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরটা অসম্পূর্ণ। আমরা চাচ্ছি যে পরিপূর্ণ একটা গঠনতন্ত্র করব। দ্রুতগতিতে এর কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক ড. পরিমল বালা বলেন, ‘গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটার অনেক সাব সেল আছে, একটা কেন্দ্রীয় সেল আছে। তারা কাজ করছে। বিভিন্ন কাজ করার জন্য কিছু সাব কমিটি আছে। একেকটা সাব কমিটিকে একেকটা কাজ অ্যাসাইন করা আছে। কাজ চলছে।
‘আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত যেন ভালো অবস্থা তৈরি হয়। ইউজিসির যে অংশটা সেটা আমরা করে দিয়েছি। সাব কমিটিগুলো কাজ করছে।’
গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন কমিটির সদস্য সচিব ও পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের উপপরিচালক সৈয়দ আলী আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘‘আমরা ইউজিসিতে প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটি পাঠিয়েছি। সেটি তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়। তখন তারা এটিকে ‘সবুজ পাতায়’ দেবে।
‘সবুজ পাতায় উঠলে পরবর্তীতে আমাদের ডিপিপি আবার প্রস্তাব পাঠাবে। সবুজ পাতায় দিতে হলে একটা “টোকেন মানি” ধরে দিতে হয়। আমরা ৫০ কোটি টাকার মতো একটা ধরে দিয়েছি। এটা বাড়তেও পারে। এর থেকে বাড়লে আবার একনেকে যাবে। সেখানে গেলে যদি আমরা ভালো কিছু পাই তাহলে তো আরও ভালো। সবুজ পাতায় উঠলে প্রজেক্টটি পাশ হতে সুবিধা হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘প্রজেক্টটি পাওয়ার পর সুপারিশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি কয়েক মাস আগেই। সেটি সরকার অ্যাপ্রুভ করবে। ইউজিসি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। পরবর্তীতে তা একনেকে যায়। আর যেহেতু এটি ছোট প্রজেক্ট তাই সেটি মন্ত্রী পর্যন্ত যাবে।’
এরই মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও গবেষণা শিল্প পরিষদের (বিসিএসআইআর) মধ্যে গবেষণা সহযোগিতা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক চুক্তি সই হয়েছে।
এ চুক্তির আওতায় বিসিএসআইআর এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভৌত ও রসায়ন বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়ন, প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক তথ্যের আদান-প্রদান, জার্নালের আদান-প্রদান, যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও কনফারেন্সের আয়োজন করা হবে।
এ ছাড়া উচ্চতর গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষক ও শিক্ষার্থীদের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রির যৌথ তত্ত্বাবধান, উভয় প্রতিষ্ঠানের দক্ষ ব্যক্তি, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট অত্যাধুনিক গবেষণাগার ব্যবহার, বিসিএসআইআর ও জবির গবেষকদের মধ্যে নিয়মিত দেখা, যৌথ প্রকাশনা ও যৌথ প্রকল্পের মাধ্যমে পাওয়া ফলের পেটেন্ট প্রক্রিয়াকরণ এবং যৌথ উদ্দেশ্য অর্জনে একে অপরকে সহযোগিতা করবে।
সম্প্রতি বিশ্বসেরা গবেষকদের নিয়ে প্রকাশিত এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্সে ২০২২-এ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৬৩ জন গবেষক স্থান পেয়েছেন।
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল ২ কোটি টাকা। সবশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে গবেষণা খাতে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।