বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইন্টারনেট নিরাপদ হবে কীভাবে

  •    
  • ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০৮:৩৯

এক জরিপে দেখা যায়, ইন্টারনেটে হেনস্তার শিকার ৮৬ দশমিক ৯০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ১৮ বছরের কম বয়সী ভুক্তভোগী ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। নিরাপদভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক কলেজছাত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ায় সোহেল রানা নামের এক যুবকের ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত। ছাত্রীটির ‘অপরাধ’ ছিল সোহেলের প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়া।

তথ্যপ্রযুক্তির এ ‍যুগে সাইবার জগতে এমন হেনস্তার ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে। নানা আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ইন্টারনেটে, যা ভুক্তভোগীকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

২০১০ সাল থেকে নিরাপদ ইন্টারনেট নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। এক যুগে এ জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তা যে খুব সফলতার মুখ দেখেছে, বলা যাবে না। এ অবস্থায় সোমবার পালিত হচ্ছে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার দিবস। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় মঙ্গলবার বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হয়।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল লিটারেসি বা জ্ঞানের অভাবের কারণেই মূলত অনিরাপদ হয়ে ‍উঠছে ইন্টারনেট। কখনও অপরাধী অজ্ঞতাবশত অন্যের জন্য ক্ষতিকর কনটেন্ট ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছেন, আবার কখনও ভুক্তভোগী না জেনেই নিজের ইন্টারনেট ব্যবহারকে অনিরাপদ করে তুলছেন।

জানতে হবে আগে

প্রচার মাধ্যমে এমন একটা গল্প চালু আছে, ‘এক লোক সপ্তাহখানেকের জন্য ঘুরতে যান। এসে দেখেন তার বাসা চোরের দখলে। চোর নিজের মতো করে বাসা ব্যবহার করছে। পরে বিচারক চোরকে শাস্তি দিলে চোর জানায়, তাকে চুরির জন্য উৎসাহ দিয়েছেন বাসার মালিক। কারণ তিনি তার ফেসবুক ফ্রেন্ড। মালিক কোথায় গেছেন, কবে আসবেন– সব কিছুই ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। ফ্রিতে সব তথ্য পেয়ে চোরের সুবিধা হয়েছে। তাই দুজনই সমান অপরাধী।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব কিছুরই একটা পরিচালন পদ্ধতি আছে। বাংলাদেশে দ্রুত তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার হলেও এর ব্যবহার সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সঠিক জ্ঞান নেই। কোন কাজ করা যাবে আর কোনটা করা যাবে না, তা মানুষকে জানতে হবে।

তারা বলছেন, কারো মেইল আইডিতে চটকদার বিজ্ঞাপনের একটা মেইল এসেছে। লোভে পড়ে তাতে ক্লিক করলে ব্যবহারকারীর মেইল বা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গেল।

তাই কোনো কিছু না জেনে তাতে ক্লিক করা যাবে না। আবার ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কতুটুকু তথ্য শেয়ার করা যাবে, সে জ্ঞানও থাকবে হবে।

বলা হয়, নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় হুমকি ব্যবহারকারী নিজেই। কেননা মানুষকে বোকা বানানোর মাধ্যমে কিংবা ভুলের কারণে অনেক সময় সাইবার আক্রমণকারী ই-মেইল অ্যাকাউন্ট চুরি করতে পারে। কেউ যদি কোনো বাজে সাইটে মেইল এবং পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে প্রবেশ করেন তবে আক্রমণকারী তার সম্পর্কে তথ্য পেয়ে যান। তারপর সেগুলোর সাহায্যে তারা অ্যাকাউন্ট চুরি করে এবং অন্যদের কাছে বিক্রি করে দেন।

তথ্য যাচাইয়ের পর ক্লিক ও শেয়ার

প্রযুক্তি মানুষের হাতের মুঠোয়। যে কেউ প্রযুক্তির সহায়তায় যে কোনো কিছু ছড়িয়ে দিতে পারে খুব সহজেই। যেহেতু বেশির ভাগ মানুষ অনলাইনে সম্পৃক্ত, তাই খুব সহজেই ভুয়া খবর ছড়িয়ে দিতে পারে যে কেউ। তাই না বুঝে শেয়ার বা ক্লিক করা যাবে না।

‘দেখা মাত্রই ক্লিক নয়, যাচাই ছাড়া শেয়ার নয়’- এ স্লোগান সামনে রেখে মানুষের মাঝে সাইবার সচেতনতা নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি সংগঠন ‘সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন’ (সিসিএএফ)।

২০২১ সালে প্রকাশিত তাদের এক গবেষণা জরিপে দেখা গেছে, ইন্টারনেট দিন দিন আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে উঠছে। হ্যাকিং, অপ্রচার, ভুল তথ্য দেয়া বাড়ছে। এটিএম কার্ড হ্যাকিং, অনলাইন প্রতারণার মতো নতুন বিপদে পড়ছেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা।

সিসিএএফের জরিপে দেখা গেছে, আগের এক বছরে অনলাইনভিত্তিক নানা অপরাধের মধ্যে অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং ২৮ দশমিক ৩১ শতাংশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের ঘটনা ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশ, অনলাইনে মেসেজ পাঠিয়ে হুমকি দেয়ার ঘটনা ১৪ দশমিক ১৬ শতাংশ।

যৌন হয়রানিমূলক একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি/ভিডিও (পর্নোগ্রাফি) ব্যবহার করে হয়রানির মাত্রা বেড়েছে। অপরাধের মাত্রাটি আগের ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২০ সালে হয়েছে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ফটোশপে ভুক্তভোগীর ছবি বিকৃত করে হয়রানির ঘটনা ঘটছে ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

এসব ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ভুক্তভোগীর বয়স ১৮-৩০ বছর, যা মোট ভুক্তভোগীর প্রায় ৮৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। ১৮ বছরের কম বয়সী ভুক্তভোগী ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ৩১ থেকে ৪৫ বছর বয়সের ভুক্তভোগী ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বের ভুক্তভোগী ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। এতে দেখা যায় ৩৫ শতাংশ মানুষই এ সম্পর্কিত আইন ও প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে জানেন না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষ বা যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে ডিজিটাল লিটারেসি নেই বললেই চলে। কোন জিনিসটা ফেক বা কোন জিনিসটা ঠিক, সেটা বুঝে না বুঝেই ক্লিক করেন।

‘আবার কোনো একটা মেইল এলে সেটা যেখান থেকে আসুক, বুঝে না বুঝে সেটা ওপেন করেন, সেখান থেকে ডাউনলোড করেন। ফলে নিজের ব্যবহৃত ইন্টারনেট অনিরাপদ হয়ে যায়। কী করতে হবে বা কী করতে হবে না – এসংক্রান্ত ডিজিটাল লিটারেসি না থাকার কারণে তিনি সাফারার হন।'

তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। যে কোনো জায়গা থেকে একটা চটকদার বিজ্ঞাপন বা হেডলাইন এলে তাতে ক্লিক করা যাবে না। আননোন সোর্স থেকে কোনো কিছু ডাউনলোড করা যাবে না। ফ্রি ইন্টারনেট পেলেই পাবলিক ওয়াইফাই বা যে কোনো জায়গায় লগইন বা ব্রাউজ করা যাবে না। খুব কমন পাসওয়ার্ড দেয়া যাবে না, নিজের পাসওয়ার্ড অন্য কারো সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না।

‘এই বিষয়গুলোতে জনগণকে সচেতন হতে হবে। আবার সরকারেরও কিছু করার আছে। এসব ঝুঁকি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে, সচেতনতামূলক নানা পদক্ষেপ নিতে হবে।'

সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) বলছে, এরই মধ্যে ২২ হাজারের বেশি জুয়া ও পর্নো সাইট বন্ধ করে দিয়েছে তারা। উসকানিমূলক বিভিন্ন পোস্টও তারা সরিয়ে নিতে কাজ করছে।

ইউটিউব ফেসবুকে আপত্তিকর ভিডিও যারা আপলোড করেন, তাদের ডেকে সতর্ক করা হচ্ছে। টিকটক ও বিগোর মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোর অ্যাপ অপব্যহার হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

তবে নানা উদ্যোগের পরও এগুলো বন্ধ হচ্ছে না। জুয়ার ওয়েবসাইট অনেকবার বন্ধ করার পরও তা লাইভ দেখা যাচ্ছে। ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) বা মিরর ওয়েবসাইট ব্যবহার করে অনেকেই অনলাইনের পর্নো সাইটসহ বিপথগামী সাইটে ঢুকছেন।

জানতে চাইলে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ‘আইএসপি বা ইন্টারনেট প্রোভাইডারদের নির্দিষ্ট নীতিমালা করে দেয়া হয়েছে। প্যারেন্টাল গাইডেন্স মেনে চললে অভিভাবকরা জানতে পারবেন তার সন্তানেরা কোন জায়গায় কী ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। বিভিন্ন সভার মাধ্যমে মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ ইন্টারনেট সম্পর্কে অবহিত করছি।

‘এর সঙ্গে আইন তো আছেই। তবে সবকিছু তো আইন দিয়ে হয় না। মানুষের মাঝে সচেতনতাই পারে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে। এ ক্ষেত্রে কিছুটা সচেতনতা কিছুটা মটিভেশন এবং কিছুটা আইনের প্রয়োগ ভালো কাজ করবে।’

সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ‘আমরা প্রায় ২২ হাজার পর্নো সাইট ও অবৈধ অনলাইন জুয়া সাইট বন্ধ করেছি। টিকটক, ফ্রি-ফায়ার, পাবজি সাইটগুলো বন্ধ করে দেয়া আছে। এগুলো ভিপিএন-এর মাধ্যমে খুব সীমিত আকারে হয়তো চলছে। লার্জ স্কেলে চলার সুযোগ নেই। ভিপিএন দিয়ে অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হয়, ফলে ভিপিএন বন্ধ করার সুযোগ নেই।

‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিরাপদ রাখা তো আমাদের হাতে নেই। কারণ এটার কন্ট্রোল ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে। তবু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিরাপদ রাখতে আমরা গুগল-ফেসবুকসহ অন্যদের সঙ্গে কোয়ার্টারলি মিটিং করি‌।’

এ বিভাগের আরো খবর