ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ষষ্ঠ ধাপে দিনাজপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর কমলপুর ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন পরাজিত সদস্য প্রার্থীরা।
তাদের অভিযোগ, ঘুষের বিনিময়ে তাদের ভোটে জিতিয়ে দেয়ার কথা বলেন ওই কর্মকর্তা। তাতে রাজি না হওয়ায় টাকা নিয়ে জিতিয়ে দেয়া হয় প্রতিপক্ষকে। একই অভিযোগ তারা করেছেন একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও।
এসব অভিযোগ লিখিতভাবে সোমবার বিকেলে জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও সমন্বিত জেলা দুদক অফিসে জমা দিয়েছেন পরাজিত মেম্বার প্রার্থী ইয়াছিন আলী, মোকলেসুর রহমান ও আহসান হাবীব।
কমলপুর ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আতাউল হক এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডের কুতইড় আলহাজ পিয়ার মহাম্মদ সরকার দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন আব্দুল্লাহ আল শামস। তারা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অভিযোগকারী মেম্বার প্রার্থী ইয়াছিন আলী জানান, আতাউল হক তার কাছে ৩ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। তা না দেয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী মেম্বার প্রার্থী নাসির উদ্দিনকে জিতিয়ে দেন তিনি।
ইয়াছিন বলেন, ‘ভোট চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আধা ঘণ্টা চারটি ইভিএম মেশিন বন্ধ ছিল। পরে তা সচল করে কর্তৃপক্ষ। আবার বেলা সাড়ে ৩টার সময় সবগুলো মেশিন পরিবর্তন করা হয়। আমি খবর নিতে গেলে আমাকে রুম থেকে বের করে দেয়া হয়।
‘জানামতে, আমার বল প্রতীক ওই কেন্দ্রে পেয়েছিল প্রায় ৫০০ ভোট, কিন্তু আমার প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছে ১২০। এ ছাড়া আমার এজেন্টকে সঠিকভাবে ভোটের ফলাফল বুঝিয়ে না দিয়ে নির্বাচনি সরঞ্জাম গাড়িতে তুলে নেয়া হয়। কোনো ফল ঘোষণা করা হয়নি।’
অভিযোগকারী মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনে আমাকে জিতিয়ে দেবে বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা আতাউল হক আমার কাছে আড়াই লাখ টাকা চেয়েছিলেন। তাকে টাকা না দেয়ায় ৩০ জানুয়ারি রাতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল শামস আমার কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করেন।
‘তাতে রাজি না হওয়ায় আমার প্রতিপক্ষকে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে জিতিয়ে দেন। এ ছাড়া নির্বাচন শেষে আমার পোলিং এজেন্টদের ইভিএম মেশিনের হিসাব না দিয়ে তারা মনগড়া সাদা কাগজের ফল ঘোষণা করেন।’
আরেক মেম্বার প্রার্থী আহসান হাবীব অভিযোগ করেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তা আতাউল আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে আমার কাছে ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে মনোনয়নপত্রের বৈধতা দেন।
‘এ ছাড়া ৩০ জানুয়ারি রাতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল শামস আমাকে ভোটে জিতিয়ে দেবেন মর্মে ২ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমি টাকা দিতে না পারায় আমার ফলাফল পাল্টে দিয়ে অন্য প্রার্থীকে জিতিয়ে দেন।’
অভিযোগের বিষয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল শামস জানান, এসব অসত্য। তার কর্মস্থলের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত তথ্য আপনাকে দিতে পারব না।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আতাউল হক বলেন, ‘তিন প্রার্থীর অভিযোগ একইভাবে লেখা হয়েছে। তারা আমার মানসম্মান নষ্ট করার জন্য এ ধরনের কাজ করছেন। তারা আমাকে নির্বাচনের দিন মৌখিকভাবে ইভিএমে কারচুপির বিষয় জানিয়েছিলেন। আমি তাদের জানিয়ে দিয়েছি যে ইভিএমে কোনো ধরনের কারচুপির সুযোগ নেই।
‘এ ছাড়া আহসান হাবীবের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে আমি বাতিল করেছিলাম। পরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর তিনি আপিল করেছিলেন। সেখানে তার মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছিল।’
এ বিষয়ে জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামাণিককে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগকারীদের ডাকা হবে। যদি তাদের অভিযোগের বিষয়ে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেন, তাহলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’