সিলেটে পুলিশ হেফাজতে রায়হান আহমদ হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া আবারও পিছিয়েছে। রোববার সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চাঞ্চল্যকর এই মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল।
পলাতক আসামি নোমানের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়ায় শুনানি পিছিয়ে দেন বিচারক আবদুল মোমেন।
এদিকে এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি পুলিশের সাময়িক বহিষ্কৃত এএসআই আশেক এলাহীর জামিন ফের নামঞ্জুর করেছে আদালত।
কারাবন্দি থাকা এই এএসআই সোমবার সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষে তার জামিন না মঞ্জুর করেন বিচারক মো. আব্দুর রহিম। এর আগে মহানগর হাকিম আদালতেও আশেক এলাহীর জামিন না মঞ্জুর হয়।
জানা যায়, কথিত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান এই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে রায়হানকে নির্যাতনের আলামত নষ্ট করা এবং মামলার প্রধান আসামি বহিষ্কৃত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায় নোমান ছাড়া এজাহারভুক্ত বাকি সব আসামিই কারাগারে আছেন।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আবুল মোমেন রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে নোমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু গ্রেপ্তার করতে না পারায় নোমানের মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেয় আদালত।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২২ ডিসেম্বর নোমানের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আমিরুল ইসলাম। তবে ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়ায় সোমবার বিচারকাজ শুরু হয়নি।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম এ ফজল চৌধুরী বলেন, কোনো আসামি পলাতক থাকলে তাকে বিচারকাজ শুরুর বিষয়টি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানাতে হয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশ থাকলেও নোমানের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর ব্যাপারে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি। এ জন্য বিচারক আবদুল মোমেন শুনানির তারিখ পিছিয়ে দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আজ আদালতকে বলেছি, দ্রুততম সময়ে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশনা দেয়ার জন্য।’
পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়া প্রসঙ্গে এই আদালতের সরকারি কৌঁসুলি জাহাঙ্গির আলম বলেন, ‘পত্রিকায় আদালতের মাধ্যমেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সাধারণত কয়েকটি মামলা একসঙ্গে করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ কারণেই হয়তো দেরি হচ্ছে।’
তবে বিচারকাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রায়হানের মা সালমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কেন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলো না, তা বোধগম্য নয়। বিচারের অপেক্ষায় আর কত দিন থাকব। আজ দেড় বছরেও বিচার শুরু হয়নি।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ অক্টোবর মাঝরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর আখালিয়া এলাকার যুবক রায়হান আহমদকে। পরদিন সকালে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী। পরে মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে মামলার অভিযোগের সত্যতা পায়।
১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এর মধ্যে পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
তবে প্রধান অভিযুক্ত আকবর ১৩ অক্টোবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান। ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই (সাময়িক বরখাস্ত) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়।
অন্য অভিযুক্তরা হলেন- এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুন অর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস, ফাঁড়ির ‘টুইআইসি’ পদে থাকা সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান।