করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখল দেশ। সোমবার দেশে ভাইরাসটিতে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এটি গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ মৃত্যু বলেও জানিয়েছে অধিদপ্তর। সেদিন ৪৩ জনের মৃত্যু সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২৮ হাজার ৬২৭ জনে।
গত মাসে দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ নিশ্চিত হয়। সে সময় হু হু করে বাড়তে থাকে শনাক্তের হার। ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। এতে করোনা শনাক্তও বাড়তে থাকে দেশে। অবশ্য গত কয়েক দিনে শনাক্ত কমে নেমেছে ১০ হাজারের নিচে।
শনাক্তের পাশাপাশি মৃত্যুও বেড়েছে এই সময়। এমনকি এক সপ্তাহ পর গতকাল রোববার মৃত্যু ৩০-এর নিচে নামে। আর এক দিনের ব্যবধানে সেই মৃত্যু সর্বোচ্চতে গিয়ে ঠেকেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯ হাজার ৩৬৯ জনের দেহে এই ভাইরাস ধরা পড়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা শনাক্ত হলো ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৯০১ জনের।
করোনা তৃতীয় ঢেউয়ে শনাক্ত ও শনাক্তের হার দ্রুত বাড়লেও মৃত্যু অনেকটা কম ছিল। গত বছর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর দৈনিক মৃত্যু ছাড়িয়ে যায় ২৬৪ জনে। তবে এবার শনাক্তের হার সর্বোচ্চ হলেও মৃত্যু অনেক কম।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৬৮টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৭১টি। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ০৭ শতাংশ। এ নিয়ে টানা ৩১ মাস শনাক্তের হার ৫ শনাক্তের ওপর। আর গতকালের চেয়ে কিছুটা বেশি।
গত ২০ জানুয়ারি করোনার তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়া নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকে। একপর্যায়ে গত ২৮ জানুয়ারি পরীক্ষা করা নমুনার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশের মধ্যে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণের পর এত বেশি হারে সংক্রমণ ধরা পড়েনি কখনও।
গত এক দিনে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ২৮ ও নারী ১০ জন। এর মধ্যে এক শিশু রয়েছে। এ ছাড়া বিশোর্ধ্ব ১, ত্রিশোর্ধ্ব ৩, চল্লিশোর্ধ্ব ৪, পঞ্চাশোর্ধ্ব ৪, ষাটোর্ধ্ব ৯, সত্তরোর্ধ্ব ৭ ও অশীতিপর ৯ জন।
বিভাগ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয় ঢাকা বিভাগে। এর পরই চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ করে মৃত্যু হয়। এর পর রাজশাহী ও খুলনাতে ৫ জন করে মারা গেছে, এ ছাড়া সিলেটে ৩, ময়মনসিংহে ২, ও রংপুরে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনা সংক্রমণেন ৫০ শতাংশের বেশি শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৩২৮টি।
মৃত্যুর ৭১ শতাংশ টিকা নেননি
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহে ২২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৭১ দশমকি ২ শতাংশ টিকা নেননি। মাত্র ২৮ শতাংশ ব্যক্তি টিকা নিয়েও করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
শনাক্ত মৃত্যু বেড়েছে
করোনা তৃতীয় ঢেউয়ে সপ্তাহ ব্যবধানে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ মৃত্যু বেড়েছে। একইসঙ্গে শনাক্ত বেড়েছে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকা কার্যক্রম শুরু করে সরকার। এক বছরে ১০ কোটি মানুষকে টিকা আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পিছিয়ে আছে।