জাপানি দুই শিশুর অধিকার নিয়ে মায়ের করা আবেদনের বিষয়ে আদেশের জন্য ১৩ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
সোমবার এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ দিন ঠিক করে দেয়।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সব কিছু আইনের ব্যাখ্যা বা আইন দিয়ে রেগুলেটেড হয় না। আমরা আপনাদের অনুরোধ করব, প্রথম থেকেই বলছি যেহেতু দুইজন (বাবা-মা) এখনও পৃথক হয়নি। বাচ্চাদের ভবিষ্যতের দিকে খেয়াল করে নিজেরা মীমাংসা করে ফেলতে পারেন কিনা। যেহেতু এখনও পৃথক হয়নি, তাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিদ্যমান আছে, ১৩ তারিখের মধ্য যদি মীমাংসা করতে পারেন তাহলে ভালো, না হলে আমরা যতটুকু শুনলাম, আইন যতটুকু আছে সে অনুসারে আদেশ দিয়ে দেব।’
আদালতে দুই শিশুর মায়ের পক্ষে শুনানি করেন আজমালুল হোসেন কিউসি, আইনজীবী আহসানুল করিম ও আইনজীবী শিশির মনির।
অন্যদিকে বাবার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ফিদা এম কামাল, ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও অনিক আর হক।
এর আগে শুনানির জন্য ৬ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করে দেয় আদালত। সে হিসেবে গতকালও মামলাটি তালিকায় আসে। তবে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসানের মৃত্যুতে গতকাল কোর্ট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে সোমবার মামলাটির শুনানি হয়।
গত ১৫ ডিসেম্বর সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ দুই শিশুকে মায়ের কাছে দেয়ার নির্দেশ দেন। আর দিনের বেলা বাবাকে দেখা করার সুযোগ দেন।
গত ১৯ আগস্ট বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্বামী শরীফ ইমরানের কাছ থেকে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই কন্যা সন্তানকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি নারী এরিকো।
রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ২১ নভেম্বর রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে দুই কন্যাকে বাবার কাছে রেখে মা বছরে তিনবার ১০ দিন করে দেখা করতে পারবেন। আর এ জন্য মায়ের সব খরচ বাবাকে বহন করতে হবে।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধেই আপিল করেন মা। ওই আপিলের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ দুই শিশুকে মায়ের কাছে রাখার আদেশ দেয়।
২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানের এরিকো ও বাংলাদেশি আমেরিকান শরীফ ইমরান জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তারা তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তারা হলো জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা।
এরিকো পেশায় চিকিৎসক। মালিকা, লিনা ও হেনা টোকিওর চফো সিটিতে আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসআইজে) শিক্ষার্থী ছিল।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান বিয়ে বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। ২১ জানুয়ারি ইমরান এএসআইজে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ এরিকোর সম্মতি না থাকায় তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে ইমরান তার মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
সে বছরের ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে তার সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এরপর ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এরিকোর অভিযোগ, ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার দুই মেয়ে জেসমিন ও লাইলাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।