উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার চার ইউনিয়নে পুনর্নির্বাচন শুরু হয়েছে।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হয়। শীতকে উপেক্ষা করে ভোট দিতে আসছেন ভোটাররা। তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের উপস্থিতির সংখ্যা বেশি চোখে পড়ে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারি পত্নীতলায় পঞ্চম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নির্বাচনি সহিংসতায় এ উপজেলার চার ইউনিয়নের পাঁচটি কেন্দ্রসহ দেশের ১০০টি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করা হয়।
পরবর্তী সময়ে ৭ ফেব্রুয়ারি পুনর্নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। সে হিসাবে স্থগিত হওয়া পত্নীতলা ইউনিয়নের মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আকবরপুর ইউনিয়নের মান্দাইন উচ্চ বিদ্যালয়, কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পানিওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ঘোষনগর ইউনিয়নের কমলাবাড়ী ও ঘোষনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণা না করেই ঘোষনগর ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্রের ব্যালট নিয়ে ফেরার পথে পুলিশের গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই দুটি কেন্দ্রের ফল স্থগিত করা হয়।
একই দিনে ভোট গণনার সময় গোলযোগের কারণে উপজেলার অন্য তিনটি কেন্দ্রের ফল স্থগিত করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
এদিকে ৫ জানুয়ারি ফলাফল ঘোষণা নিয়ে ঘোষনগর ও নজিপুর ইউনিয়নে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ঘোষনগরে স্বতন্ত্র এক চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১১৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত দুই হাজারজনকে আসামি করে মামলা করে।
মামলায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারজানা পারভীন ও তার স্বামী মতিউর রহমানসহ এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই মামলায় নির্বাচনি এলাকায় গত এক মাস ধরে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গ্রেপ্তার আতঙ্কের কারণে ভোটারদের কেন্দ্রে আনাকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সমর্থকরা।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারজানা পারভীনের জামাতা আতাউর রহমান জানান, যে দুটি কেন্দ্রের ফল স্থগিত করা হয়েছে, সে দুটি কেন্দ্রেই ভোট গণনার সময় ঘোড়া (স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারজানার প্রতীক) অনেক ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। কিন্তু কেন্দ্রে ফল ঘোষণা না করেই ব্যালট ও মালামাল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়।
এ সময় উপস্থিত জনগণ তাদের বাধা দিলে পুলিশ গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় পুলিশের মামলার কারণে কেন্দ্র দুটির পুরুষ ভোটাররা আতঙ্কে পালিয়েছেন।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আকবরপুর ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জামান চৌধুরী ও পত্নীতলা ইউপিতে ওবায়দুল ইসলাম। এ ছাড়া কৃষ্ণপুর ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম।
তারা জানান, স্থগিত হওয়া কেন্দ্র ছাড়া বাকি কেন্দ্রের ফলাফলে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের চেয়ে এগিয়ে আছেন। তিন ইউপিতেই তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।
নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা তাদের সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। এসব কারণে সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে তারা শঙ্কায় আছেন।
এ বিষয়ে পত্নীতলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে আছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট সম্পন্ন হবে।’