সপ্তাহখানেক পর অবসান হতে যাচ্ছে হুদা কমিশনের পাঁচ বছরের দায়িত্বের। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবন ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কমিশনাররা। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে শেষ হচ্ছে সিইসি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের মেয়াদ।
বিদায়ের ঘণ্টাধ্বনি এখনই কানে বাজছে। কমিশনার ও তাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের ব্যস্ততাও বেড়েছে। শেষ সময়ে বিভিন্ন জরুরি কাজ সারছেন তারা।
একাধিক নির্বাচন কমিশনারের কক্ষে গিয়ে কাগজপত্র ও নথির ভিড় দেখা গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের সপ্তম ও অষ্টম ধাপের ভোট এখন কমিশনের শেষ দায়িত্ব।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটির (অনুসন্ধান কমিটি) সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে রোববার হয়েছে প্রথম বৈঠক। আগামী নির্বাচন কমিশনার কে হবেন, তা নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম সুপারিশ করবে এ কমিটি। নির্বাচন ভবনে এ নিয়েও চলছে আলোচনা। নির্বাচন কর্মকর্তারা ব্যস্ত নতুন কমিশনার কারা হতে পারেন, সেই হিসাব কষতে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা শফিউল্লাহকে রোববার দেখা যায় ইবনে সিনা মেডিক্যালের বিভিন্ন রসিদ নিয়ে হিসাব করছেন। সিইসি হুদা তার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বাড়িতে নেয়া শুরু করেছেন কি না জানতে চাওয়া হয় তার কাছে।
নিউজবাংলাকে শফিউল্লাহ বলেন, ‘এইখানে স্যারের এমন কিছু নাই, যেগুলো নিতে ট্রাক বা অন্য কিছু লাগবে।’
এ মেয়াদে নানা ইস্যুতে বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় থাকা কমিশনার মাহবুব তালুকদার তার কিছু বই নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এনাম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুই নিতেছে না স্যার। তার সব বই এখানে দিয়ে যাবে; কমিশনে দিয়ে যাবে।’
মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনে তার পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লেখার কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। শেষ দিনগুলোতে বইটির কাজ শেষ করার দিকে তাকে মনোযোগী দেখা যায়। বইটির নাম হতে পারে ‘নির্বাচননামা’।
আরেক কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন এক আলাপচারিতায় বলেন, ‘মূলত এটাই তো লাস্ট উইক। এর পরে দুই দিন আছে। সে দুই দিন খুব জরুরি কিছু না থাকলে হয়তো নাও আসতে পারি।’
১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অফিস করে নিজের মেয়াদ ষোলো আনা পূর্ণ করতে চান কমিশনার রফিকুল ইসলাম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শেষ দিন যেদিন, সেদিন পর্যন্ত থাকব। আমরা তো এখানে বসে থাকার জন্য আসিনি। যেদিন মেয়াদ শেষ, সেদিন চলে যাব।’
ব্যবহৃত সরঞ্জাম গোছানোর কাজ কতটা এগিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গোছানো না গোছানোর কিছু নেই। এখানে আমাদের এমন কী আছে? চাকরি করতে আসছিলাম। মানুষ যেভাবে আসে-যায়, সেভাবেই যাব।’
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয় কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। দায়িত্ব নেয়ার পর নির্বাচনি রোডম্যাপ তৈরিতে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করে নজর কাড়লেও সমালোচনা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারেননি তারা।
দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমে কুমিল্লা ও পরে রংপুর সিটি নির্বাচন আয়োজন করে বেশ প্রশংসা কুড়ালেও সমালোচনা পিছু ছাড়েনি হুদা কমিশনের। রাজনৈতিক অঙ্গনে তারা যেমন সমালোচনার মুখে পড়েন, নির্বাচনি পর্যবেক্ষকরাও ছাড় দেননি তাদের।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তারা। এ ছাড়া নির্বাচন সংক্রান্ত অসদাচরণ ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা এই কমিশনের বিরুদ্ধে।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের মন্তব্যেও একাধিকবার বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন হুদা কমিশন। প্রকাশ্যে সিইসি কে এম নূরুল হুদা ও কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।